মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

মসজিদে অভ্যন্তরে প্রধানমন্ত্রী ও আ’লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে জাহাঙ্গীরের বিষেদ্গার

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০২৩
  • ১০৮ বার পঠিত

ক্ষমা পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও জাতীয় কমিটির সকল নেতৃবৃন্দের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পর এবার তাদের নিয়েই বিষেদ্গার করছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিষেদগার করা জাহাঙ্গীরের বক্তব্য যুগান্তরগাজীপুর কথা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাসিক’র সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্দেশ অমান্য করে মসজিদে নামাজ ও খুতবা থামিয়ে আবার ওয়াজ মাহফিল থামিয়ে নিজের ব্যক্তিগত গুণগান প্রচার করে ও শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে বিষেদ্গার করে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় ইমাম সমিতির গাজীপুর মহানগর শাখার উদ্যোগে পূবাইল মেট্রোপলিটন থানার ৪০, ৪১ ও ৪২নং ওয়ার্ডের জান্নাতুল মাওয়া মাদ্রাসা, রহমানিয়া জামে মসজিদ ও কুদাব জামে মসজিদে গত সোমবার আসর বাদ ইফতার ও দোয়া মাহফিলে জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের নিয়ে জাহাঙ্গীর বিষেদ্গার করেন।

যুগান্তর ও গাজীপুর কথা পত্রিকায় “প্রধানমন্ত্রী সত্যটা বুঝতে শুরু করেছেন: জাহাঙ্গীর আলম” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে জানা যায় যে জাহাঙ্গীর বলেছেন, “শেখ হাসিনাকে ভুল মেসেজ দিয়ে যারা আমাকে ১৫ মাস ধরে আপনাদের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন দেরিতে হলেও তাদের তিনি চিনতে পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেরিতে হলেও আসল সত্যটা বুঝতে শুরু করেছেন।”

সাংবাদিক নেতা রাহিম সরকার বলেন “মূলত জাহাঙ্গীর তাকে বহিষ্কারের জন্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দদেরই দায়ী করছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার মেধা ও যোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। জাহাঙ্গীরকে আওয়ামী লীগের ক্ষমা ঘোষণা বাতিল করা এখন সময়ের দাবি।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের মীমাংসিত ইস্যু এবং জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে জাহাঙ্গীরের বিতর্কিত মন্তব্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পরে। জাহাঙ্গীরের এমন বক্তব্য দলীয় ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পরিপন্থি। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাহাঙ্গীর আলমের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাকে দল থেকে বহিষ্কার ও মেয়র পদ থেকে অপসারণের দাবি জানান গাজীপুর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। টানা টানা কয়েকদিন থেমে থেমে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে আন্দোলনও করেন। ঘটনাটির খবর কেন্দ্র পর্যন্ত গড়ালে সেখানেও নড়েচড়ে বসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। গত ৩ অক্টোবর তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয় কেন্দ্র থেকে। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তাকে সে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়— সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত আপনার বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে, যা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ পরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের সামিল। এটি সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ৪৭ ধারা মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাহাঙ্গীর সে নোটিশের জবাব দিলে ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়। তবে জাহাঙ্গীরের জবাব যুক্তিসঙ্গত মনে হয়নি।

২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে জাহাঙ্গীরকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকের এজেন্ডা উপস্থাপনকালে গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দলের পক্ষ থেকে দেয়া কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এ নিয়ে বক্তব্য প্রদানকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখায় জাহাঙ্গীর আলমের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে কড়া বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে থেকে বক্তব্য রাখেন সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনিসহ অনেকেই। অনেক নেতাই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করারও দাবি জানান। বৈঠক সূত্র জানায়, এ সময় দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য জানতে চান দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই হাউসে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সবাই একমত দিয়েছেন, আমি তাতে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নেত্রী আপনাকে অনুরোধ করছি। এরপর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেন, গাজীপুর সিটি মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে তাকে (জাহাঙ্গীর আলম) বহিষ্কার করা হলো। একই সঙ্গে তার প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করা হলো।

গত ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বহিষ্কার হওয়া নেতাদের আবেদনের ভিত্তিতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভার আগে যারা দোষ স্বীকার করে আবেদন করেছিলেন, তাদের ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে শর্ত সাপেক্ষে ক্ষমা পান জাহাঙ্গীর আলম। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, “শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বার্থ, আদর্শ, শৃঙ্খলা তথা গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার জন্য ইতোপূর্বে আপনাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি প্রদান করা হয়। আপনার বিরুদ্ধে আনিত সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ স্বীকার করে আপনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র, নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কোনো কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হবেন না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এমতাবস্থায়, গত ১৭ ডিসেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ১৭(৬) এবং ৪৭(২) ধারা মোতাবেক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট সাধারণ ক্ষমা প্রার্থনা করে আপনার প্রেরিত লিখিত আবেদন পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতে সংগঠনের স্বার্থপরিপন্থি কর্মকাণ্ড ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ না করার শর্তে আপনার প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হলো। উল্লেখ্য, ভবিষ্যতে কোনো প্রকার সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে, তা ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।”

তখন এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর যুগান্তর পত্রিকাকে বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করায় আওয়ামী লীগ সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অপরদিকে, দুর্নীতির অভিযোগে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার পর সম্প্রতি মেয়র পদ ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়েরের পর থেকে সামাজিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং মসজিদে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে বিষোদগার করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com