নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছেন, ‘সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা জঙ্গিবাদে জড়ায়। সরাসরি জঙ্গি কার্যক্রম করার আগে কতগুলো ধাপ থাকে। যেটাকে আমরা রেডিকালাইজেশন প্রসেস, লিডিং টু ভায়োলেন্স এক্সট্রিমিজম বলি। এরপর টেরোরিজম। এ পর্যায়ে সচেতনতা ছাড়াও ইন্টারভেন্ট (হস্তক্ষেপ) করা না গেলে শুধু আইন প্রয়োগ করে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদ মোকাবিলা সম্ভব নয়।’
রোববার (৩০ জুন) বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ে সেরা রিপোর্টিং ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়ার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
সিটিটিসি প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তরুণদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি জঙ্গিবাদ দমনের সঙ্গে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে যে পরিবর্তন হতে থাকে তখন পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, কমিউনিটি, মিডিয়া, আলেম সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের একটা ভূমিকা থাকে। এ জঙ্গিবিরোধী সচেতনতায় সবাইকে সম্পৃক্ত করার জন্য আমরা ওয়ার্কশপ ও সভা-সেমিনার করেছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি মাদরাসার শিক্ষার্থী-শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের নিয়েও বসেছি।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার (১ জুলাই) সেই দিন। যে দিনে গত তিন বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিসান হামলা করেছিল জঙ্গিরা। এ উপলক্ষে এক সপ্তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। আমরা সবাইকে সম্পৃক্ত করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ থেকে উগ্রবাদের ঝুঁকি ও শঙ্কা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। দেশ জঙ্গিমুক্ত সোনার বাংলায় পরিণত হবে।’
অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণসংযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘পেশাগত জীবনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং হচ্ছে সাংবাদিকতা। এ পেশার মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন ক্রাইম রিপোর্টাররা। বিশেষ করে যারা উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ বিষয়ে রিপোর্টিং করেন। জঙ্গিবাদবিরোধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্পেশাল ফোর্সের সদস্যদের মতোই এ রিপোর্টাররা ঝুঁকিতে থাকেন।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকতার মধ্যে অপরাধ বিষয়ক সাংবাদিকতা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। একসময় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়কেন্দ্রিক আতঙ্ক ছিল, ভয় ছিল। কিন্তু এখন সেটা নেই। সেটা হয়েছে একজন মানুষের কারণে। তিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল মনিরুল ইসলাম।’
তিনি বলেন, ‘উগ্রবাদ বা জঙ্গিবাদ কোনো দেশের জন্য কখনোই মঙ্গলজনক নয়। আজ দেশের মানুষ ও গণমাধ্যম উগ্রবাদের বিরুদ্ধে। সরকার উগ্রবাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের কথা এ কারণেই বলছি যে, কোনো সরকারের আমলে সরকারি মদদেও জঙ্গিবাদী তৎপরতা হয়েছে। সে জায়গা থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড় করিয়েছে বর্তমান সরকার।’
প্রেস ক্লাব সভাপতি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের অবদান অনস্বীকার্য। এ দেশ যেন স্বাভাবিক থাকে, সুন্দর থাকে সে জন্যই অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরাও কাজ করে চলছেন।’
ডিবিসি টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ‘সহিংস উগ্রবাদ বিষয়ক রিপোর্টিং সহজ বিষয় নয়। পুলিশের মতো এক্ষেত্রে সাংবাদিকেরও ঝুঁকি রয়েছে। পুলিশ বাহিনী বাড়তি দায়িত্ব পালন করছে। সীমিতসংখ্যক সদস্য দেশকে যেভাবে নিরাপদ রেখেছেন তাতে আমরা কৃতজ্ঞ। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ের ক্ষতির পর পুরো বিশ্বে নাড়া দিয়েছিল। আমরা আপনাদের পাশে আছি। উগ্রবাদ দমনে আপনাদের পাশে থাকবে গণমাধ্যম।’ উগ্রবাদের বিরুদ্ধে সমাজে সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অব্যাহত রাখার কথাও বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন ও সিটিটিসির উপ-কমিশনার (ডিসি) প্রলয় কুমার জোয়ার্দার।