গত কয়েক দশকে চিকিৎসাব্যবস্থা ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে। এখন নিখুঁত রোগ নির্ণয়ের জন্য রয়েছে অনেক ধরণের পরীক্ষা। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানের যতই উন্নতি হোক, এখনও প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য ক্লিনিক্যাল আই-এর উপরই ভরসা রাখেন চিকিৎসকেরা। তারা রোগীর চোখ, জিভ, নখ দেখেই অনেক রোগ সম্পর্কে আন্দাজ করে নেন। তারপর টেস্ট দেন সেটা নিশ্চিত হতে।
এই প্রসঙ্গে ভারতীয় মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: রুদ্রজিৎ পাল বলেন, গ্রাম-গঞ্জে যেখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা খুব একটা উন্নত নয়, সেখানে রোগ নির্ণয়ের জন্য মূলত ক্লিনিক্যাল আই-এর উপরই ভরসা রাখেন চিকিৎসকেরা।
শুধু চিকিৎসকরা নন, সাধারণ মানুষও কিন্তু একটু সচেতন হলেই নিজের নখের অবস্থা দেখে রোগের উপস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। কারণ, নানা রোগে নখের রং, আকৃতি-প্রকৃতির পরিবর্তন হয়।
জন্ডিস
জন্ডিসের মতো গুরুতর অসুখে আক্রান্ত হলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে নখেও। ফলে নখ হলুদ হয়ে যায়। তাই যদি দেখেন, হঠাৎ করেই হাত-পায়ের সব নখ হলুদ হয়ে গেছে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
তবে নখ হলুদ হলেই জন্ডিস ভেবে আতঙ্কিত হবেন না। যারা নিয়মিত ধূমপান করেন, তাদেরও হাতের নখ হলুদ হয়ে যায়।
রক্ত স্বল্পতা
ডা: রুদ্রজিৎ পাল জানান রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগীদের রক্তে হিমোগ্লোবিনে মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম থাকে। তার তারা দুর্বলতা, শ্বাসকষ্টসহ একাধিক সমস্যায় পড়েন।
আমাদের নখেও কিন্তু রক্তাল্পতার লক্ষণ প্রকাশ পায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে নখের রং ফ্যাকাশে হয়ে যেতে পারে।
এছাড়া আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হলে অনেকের নখ চ্যাপ্টাও হয়ে যায়।
অতএব নখে এই ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ভাস্কুলাইটিস
হৃৎপিণ্ডের ইনফেকশনজনিত সমস্যার নাম ভাস্কুলাইটিস। এই রোগের অনেকগুলো লক্ষণের মধ্যে একটি হলো নখের তলায় ব্লিডিং। এর ফলে নখের তলায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়।
তাই এমন লক্ষণ দেখা দিলে সময় ক্ষেপণ না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ক্যানসার
নখের নিচে বাসা বাঁধতে পারে ভয়ংকর ক্যানসারও। যদি নখের নিচে কালো কালো স্পট তৈরি হয় এবং তা ধীরে ধীরে আকারে বাড়তে থাকে, তাহলে সাবধান হন।
সেইসঙ্গে সোরিয়াসের মতো ত্বকের অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হলেও নখ ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। এমনকি অল্প আঘাতেও ভেঙে যায় নখ। অনেক সময় নখ এবড়ো-থেবড়োও হয়ে যায়।
আর্সেনিক পয়জনিং
আর্সেনিক পয়জনিংয়ের লক্ষণও দেখা দিতে পারে নখে। ডা: রুদ্রজিৎ পাল জানান, এই রোগের ক্লাসিক্যাল লক্ষণ হল নখে সাদা সাদা দাগ। তাই কারও নখে এই লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকেরা আর্সেনিক পয়জনিংয়ের ধারণা করেন। তাই এমন উপসর্গ দেখলে সাবধান হন।
এসবের বাইরেও অন্য অনেক কারণে নখে উপরোল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। তাই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়বেন না, নিজ থেকে কোন চিকিৎসাও নেয়াও ঠিক হবে না। সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদন। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।