উত্তরা সংবাদ দাতা :
মানব পাচার মামলায় এ চক্রের মুলহোতা উত্তরখানের বহুরুপি প্রতারক ইউসুফ ও তার সহযোগী হাসান ছৈয়াল নড়িয়া থেকে গ্রেফতার হয়েছে। ইউসুফ ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের খবর শুনে এলাকার নিরীহ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। গত কয়েকদিন যাবত পাড়া মহল্লায় মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় মানব পাচার ও জালিয়াত চক্রের সদস্য, ভুমিদস্যু, প্রতারক ইউসুফের ছবি দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়েছে।
এ ঘটনায় উত্তরখান মধ্যপাড়া,হযরত শাহ কবির (রহ.)সরকার বাড়ী জামে মসজিদের মুসুল্লিগণ তীব্র নিন্দা জানিয়ে ইউসুফের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানান।
এদিকে আতিক মোড়লের করা মানব পাচার মামলার ৩ নং আসামী হাসান ছৈয়াল (৩০) কে নড়িয়া থেকে গ্রেফতার করেন পালং মডেল থানার পুলিশ।
গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে শরীয়তপুর পালং মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ আকতার হোসেন বলেন, হাসান ছৈয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ২ দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবৎ মোটা বেতনের চাকুরী দিয়ে ইতালি পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে নিরীহ যাত্রীদেরকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে অভিবাবকদের নিকট হইতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন,গড়ে তুলেছেন আলিশান বাড়ী, কিনছেন নামে বেনামে নতুন নতুন গাড়ি। এ গাড়ি চড়ে বীরদর্পে বিভিন্ন এলাকায় দাবিয়ে বেড়াচ্ছে।তাদের চাহিদামত টাকা না দিলে খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এই মানব পাচার চক্রের মুলহোতা ইউসুফের নামে রয়েছে শরীয়তপুর পালং মডেল থানাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় একাধীক মামলা।
মামলা সুত্রে জানা যায়, মোঃ আতিক মোড়লের ছেলে শামীম মোড়লকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে গত ২০/৮/২০২২ ইং তারিখ বিবাদী নারগিস বেগম ও মোঃ ইউসুফ পাসপোর্টসহ নগদ পাঁচ লাখ টাকা নেন এবং গত ১৮/১০/২০২২ ইং তারিখ শামীম মোড়ককে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশ্য লিবিয়া পাঠায়। লিবিয়া নিয়ে শামীম সহ অন্যান্য যাত্রীদের জিম্মি করে রাখেন তারা। এসময়,খুন করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার ভয় ভীতি দেখাইয়া ২ জন যাত্রীর অভিবাবকের নিকট হইতে কয়েক দফায় ২৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্রটি। নিরুপায় হয়ে অভিবাবকেরা জড়িতদের বিরুদ্ধে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল শরীয়তপুর -এ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এর ৬/৭/৮/৯/১০ ধারায় ২ টি মামলা করেন আতিকুর মোড়ল( ৫০) ও জৈনক জি এম ওহেদুজ্জামান। গত ২৭/৭/২০২৩ ইং তারিখ ওহেদুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেন যাহার নং-২০। গত ১৭/০৮/২০২৩ ইং তারিখ আতিক মোড়ল তার ছেলের খবরাখবর না পেয়ে শরীয়তপুর পালং মডেল থানায় একটি মামলা করেন যাহার নং -১৫।
মামলার খবর পেয়ে আসামীরা একে একে গা ঢাকা দেয় এবং আত্মগোপন করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৫ ই আগষ্ট উত্তরখান মধ্যপাড়া নিজ বসত বাড়ী থেকে ভয়ংকর মানব পাচার চক্রের গড ফাদার ভুমিদস্যু ইউসুফকে প্রশাসনের এক চৌকস টিম গ্রেফতার করেন। শরীয়তপুর পালং মডেল থানা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করেন।এক মামলার বাদি জি এম ওহেদুজ্জামান শরীয়তপুর জেলার পালং মডেল থানার অন্তর্গত তুলাসার গ্রামের মৃত গাজী আবদুল মান্নানের ছেলে। অপর মামলার বাদি মোঃ আতিকুর মোড়ল শরীয়তপুর জেলার পালং মডেল থানার চর যাদবপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তাদের করা দুইটি মামলা সুত্রে জানা যায়, ইউসুফ ও তার সহযোগিরা মিলে ওহেদুজ্জামানের ভাগিনা জোহান আহম্মেদ ইমুকে ও আতিকুর মোড়লের ছেলে শামীম মোড়কে ইতালি পাঠানোর কথা বলে প্রথমে একজন থেকে ৪ লাখ ও অপর ব্যক্তি থেকে ৫ লাখ টাকা নেন। পরবর্তিতে লিবিয়া নিয়ে তাদেরকে বদ্ধ ঘরে আটকিয়ে জোড় পূর্বক আরো ৭/৮ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেয়।
মামলা সুত্রে আরো জানা যায়, গত ১৫/০৪/২০২২ ইং তারিখ ইউসুফ ও মামলার অপর আসামি ইসমাইল তালুকদার( ৫৫) মিলে জোহান আহম্মেদ ইমুকে লিবিয়া পাঠায়।এছাড়াও আক্তার ছৈয়াল,নারগিছ বেগম,হাসান ছৈয়াল,মোঃ ইউসুফ এবং নুরুল ইসলাম খন্দকার মিলে গত ১৮/১০/২০২২ ইং তারিখ শামীম মোড়লকে ইতালি পাঠানোর উদ্দেশ্য লিবিয়া ফ্লাইট করায়। আসামীগণ তাদের এজেন্ট নামীয় লাঠিয়াল বাহিনী দ্বারা ইমু ও শামীম মোড়লকে লিবিয়াতে বদ্ধ ঘরে আটক রেখে শারীরিক নির্যাতন করেন। দালালদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে গত ০৫/১০/২০২২ইং তারিখ ওহেদুজ্জামানের ভাগিনা ইমু লিবিয়া থেকে গোপনে ফোন করে নির্যাতনের বর্ননা দিয়ে কান্নাকাটি করে। এসময় মামলা সুত্রে আরো জানা যায়, গত ১৫/৭/২০২৩ ইং তারিখ বিবাদীগণ শামীম মোড়লকে হাত -পা বেধে ভিডিও কলে আতিক মোড়লকে দেখায় এবং ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি নিয়ে বাদীগণ একাধিকবার আসামীদেরকে জানালে তারা নানান তালবাহানা করে ঘুরাইতে থাকে। দীর্ঘ ৯/১০মাস অতিবাহিত হওয়ার পর জোহান আহম্মেদ ইমু ও শামীম মোড়লের সাথে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয় গুলো বাদীরা আবারো আসামিগণকে জানালে তারা মিথ্যা কাহিনি সাজাইয়া বাদীগণকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করে। একাধিক সুত্রে জানা যায়, ১৯৭৮/১ উত্তরখান মধ্যপাড়া সরকার বাড়ি এলাকার বাসিন্দা বহুমুখী প্রতারক ইউসুফ দীর্ঘদিন যাবৎ জালটাকার ব্যবসার সাথে জড়িত। জালটাকা বানানো এবং বিক্রি করার সময় সে প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হয়। ঐ মামলায় সহযোগি সহ মোঃ ইউসুফের তিন বছর সাজা হয়।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে ইউসুফ তার সহযোগীদের নিয়ে রে্যাব পরিচয়ে উত্তরখানে জমি দখল করতে গিয়ে প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হয়।