৭৫ বছর বয়সী মোতাহার হোসেন মুন্সি। অফিস সহকারী হিসেবে ঢাকায় গণপূর্ত অধিদফতরে চাকরি করতেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। এরই মধ্যে মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তিনি। অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান স্ত্রী মাসুমা বেগম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, মৃত্যুর পর টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিনদিন বাড়ির উঠানে পড়েছিল তার মরদেহ। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মোতাহার হোসেন মুন্সির দাফন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে পুলিশের হস্তক্ষেপে মরদেহটি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, মোতাহার হোসেন মুন্সি ঢাকায় গণপূর্ত অধিদফতরে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বেশ কয়েক বছর আগে তিনি চাকরি থেকে অবসরে যান। তার স্ত্রী মাসুমা বেগমকে নিয়ে তিনি ধানমন্ডির কলাবাগান এলাকায় থাকতেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। কিছুদিন আগে মোতাহার হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন পড়ে। তাই তার ঢাকায় থাকা এক খণ্ড জমি তিনি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।
এরপর গত এক সপ্তাহ আগে অসুস্থতা বেশি হওয়ায় তাকে ঢাকার আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) তিনি মারা যান। এর পরদিন মোতাহার হোসেনের মরদেহ দাফনের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে পলাশবাড়ী উপজেলার শাকোয়া মাঝিপাড়া গ্রামে আনেন তার স্ত্রী। পরে ওই মরদেহ দাফনে বাধা দেন মোতাহার হোসেনের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম মুন্সি ও তার ভাতিজা হাবিবসহ পারিবারের কয়েকজন।
এ সময় তারা মাসুমা বেগমের কাছে মোতাহার আলীর কাছে থাকা জমি বিক্রির ২ কোটি ১৮ লাখ টাকা কোথায় কোন ব্যাংকে আছে তা জানতে চান। এ নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলে মরদেহ নিজ বাড়ির উঠানে পড়ে থাকে। স্থানীয়রা চেষ্টা করেও দ্বন্দ্বের নিরসন করতে পারেননি। অবশেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে মরদেহ দাফন না হওয়ার ঘটনা জানতে পারেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পলাশবাড়ী থানা পুলিশ। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বৈঠক করে উভয়কে নিয়ে একটি সমঝোতার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর তাদের উপস্থিতিতে নিজ বাড়ির উঠানে জানাজা নামাজ শেষে মোতাহার আলীর মরদেহ দাফন করা হয়।
ভাই-ভাতিজাদের অভিযোগ, কিছু দিন আগে মোতাহার আলী তার নিজ নামে জমি দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা বিক্রি করেন। সেই টাকা স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রাখেন। পরে মাসুমা বেগম গোপনে ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা উত্তোলন করেন।
বেতকাপা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নিঃসন্তান মোতাহার আলীর মরদেহ দাফনে আপত্তি জানান ভাই-ভাতিজারা। এ কারণে মরদেহ বাড়ির উঠানে ছিল। দেনা-পাওনা এবং সম্পদ বিক্রির প্রায় দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা নিয়ে তার স্ত্রী মাসুমা বেগমের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ান তার পরিবারের লোকজন। অবশেষে উভয়কে নিয়ে পারিবারিকভাবে অর্থ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। মোতাহার আলীর স্ত্রী মাসুমা বেগম তার ভাই-ভাতিজাদের ৬০ লাখ টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়েছেন। এরপরই নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।
পলাশবাড়ি থানার ওসি আরজু মো. সাজ্জাদ জানান, টাকা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তিন দিনেও মরদেহ দাফন হয়নি এমন খবরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে পারিবারিকভাবে অর্থ সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের বিষয়ে সমঝোতা হওয়ায় দুই পক্ষকে বুঝিয়ে রাতে মরদেহ দাফন করা হয়েছে।