ইসরাইলি এক ভাস্করের দেওয়া ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কারটি জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক শীর্ষ সংস্থা ইউনেস্কোর পুরস্কার বলে দাবি করেছেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ইউনূস সেন্টার থেকে গত ২১ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি করা হয়; কিন্তু বুধবার জানা গেল ভিন্ন তথ্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন (বিএনসিইউ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ড. ইউনূসকে ইউনেস্কো থেকে পুরস্কার দেওয়া হয়নি। এটি নিয়ে ড. ইউনূস প্রতারণা ও পরিকল্পিত মিথ্যাচার করেছেন।
ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানিয়েছে- প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দপ্তর এ বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় এবং ইউনূস সেন্টারের অফিসিয়াল ওয়েব পেজে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইউনেস্কো কর্তৃক ‘ট্রি অব পিস’ পুরস্কার প্রদানের সংবাদটিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশনের (বিএনসিইউ) দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে।
ইউনূস সেন্টারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে গত ১৬ মার্চ আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত ১১তম গ্লোবাল বাকু ফোরোমে ড. ইউনূসকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
কিন্তু ইউনেস্কো ঢাকা অফিস জানাচ্ছে, প্যারিসের ইউনেস্কো সদর দফতর এ বিষয়ে একেবারেই অবহিত নয়। ১১তম বাকু ফোরাম যেখানে এ সম্মাননা দেওয়ার সংবাদ প্রচার হয়েছে সেখানে ইউনেস্কোর কোনো অফিসিয়াল প্রতিনিধিত্বই ছিল না। অধিকন্তু ইউনূস সেন্টারের দাবি করা সম্মাননা ইউনেস্কোর কোনো পুরস্কার বা সম্মাননাও নয়। ড. ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ নামে একটি ভাস্কর্য স্মারক দেন ইজরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের।
মিজ হেদভা নিজে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ‘ট্রি অব পিস’ প্রদানে ইউনেস্কোর কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। নিজামী গনজবী ইন্টারন্যাশন্যাল সেন্টারের আমন্ত্রণে ইজরাইলি ভাস্কর্য শিল্পী মিজ হেদভা সের ড. ইউনূসকে এটি দেন। মিস হেদভা সের ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক কূটনীতি বিষয়ক গুইউইল অ্যাম্বাসেডর, কিন্তু ইউনেস্কোর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিনিধি নন এবং ইউনেস্কোর কোনো সম্মাননা দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না।
সুতরাং, উল্লিখিত বাস্তবতার নিরিখে- বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন, ড. মুহাম্মদ ইউনুস পরিচালিত ইউনূস সেন্টারের পাঠনো এবং প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতারণামূলক বলে মনে করে তার নিন্দা জানাচ্ছে। বাংলাদেশ ইউনেস্কোর অন্যতম সক্রিয় সদস্য রাষ্ট্র। ভবিষ্যতে ইউনেস্কোর মতো জাতিসংঘের এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ এবং সুখ্যাতিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নাম অপব্যবহার থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং ইউনূস সেন্টারকে সতর্ক করা হলো।
বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের আদালত ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ টেলিকমের আরও তিনসিনিয়র কর্মকর্তাকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার সহযোগীরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন, যেটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। এছাড়াও আয়কর আইন লঙ্ঘনের জন্য তার ব্যক্তিগত আয়কর দাবি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং তিনি যতদিন আদালত কর্তৃক নির্দোষ প্রমাণিত নন, ততদিন তাকে কোনো মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার কিংবা সম্মাননা প্রদান সমীচীন নয়।
বাংলাদেশে ইউনেস্কোর সঙ্গে কার্যক্রমের জন্য সরকারের ফোকাল পয়েন্ট হচ্ছে- কেউ যাতে ইউনেস্কোর নামের অপব্যবহার কিংবা অপপ্রয়োগ না করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। সেই হিসেবে ইউনেস্কোর নাম অপব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনেস্কো ঢাকা অফিস, বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন এবং ইউনেস্কোতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির সঙ্গে পরামর্শ করে ইউনেস্কো সদর দফতরকে অবহিত করা হবে।