দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। তবে মানসম্মত শিক্ষক, প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার অভাবে এসব প্রতিষ্ঠান এক সময় চলতে পারে না। তখন এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।
তবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম না চললেও শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন বাতিল হয়নি। রয়ে যায় এডুকেশনাল ইনস্টিটিউট আইডেনটিফিকেশন (ইআইআইএন) নম্বরও। তাই এসব প্রতিষ্ঠানকে কাগজপত্রে এখনো বন্ধের তালিকাভুক্ত করা হয়নি।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্যানুযায়ী, সারাদেশের ২ হাজার ৬৯৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম গত কয়েক বছরে বন্ধ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত বেসরকারি। এর মধ্যে ৯১২টি কলেজ, ৭৪১টি মাদরাসা, ৩৭ শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, ৩১৩টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান, ৪৪টি পেশাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৩টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে।
দেশের মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ, সংকলন ও বিতরণ করে সরকারি সংস্থা ব্যানবেইস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে সারাদেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ১৮ হাজারের বেশি। স্কুল অ্যান্ড কলেজ আছে প্রায় দেড় হাজার। কলেজ আছে ৩ হাজার ৩৪১টি, মাদরাসা ৯ হাজার ২৫৯টি, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ৫ হাজার ৩৯৫টি এবং বিশ্ববিদ্যালয় আছে ১৭১টি।
সংস্থাটির প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যালয়। গত কয়েক বছরে ১ হাজার ২৭৪টি বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। এ ছাড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ অর্থাৎ যেখানে উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি মাধ্যমিক স্তরেও পড়ানো হয়, সেই ধরনের ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যকম বন্ধ হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাজধানীর কাঁটাবনের ওয়েস্টার্ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও ঢাকার কলাবাগানের লেক সার্কাস এলাকার আরো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে- তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি ব্যানবেইসের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, ২০২০ সালে করোনা শুরুর পর দীর্ঘ দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রভাবও পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, অপ্রয়োজনীয়ভাবেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। কিন্তু সেগুলোতে মানসম্মত শিক্ষক, অবকাঠামো তৈরি হয়নি। ফলে একটা সময় পর আর এসব প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। এছাড়া করোনার কারণেও অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে।
তিনি আরো বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানগুলো এ রকম অবস্থায় আছে, তার তথ্য শিক্ষা বোর্ডগুলোর কাছে আছে। তাই শিক্ষা বোর্ডগুলোর উচিত এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ইআইআইএন নম্বর বা অনুমোদন বাতিল করে ব্যানবেইসকে জানিয়ে দেওয়া, যেন ব্যানবেইস প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।