শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::

ঢাকা ছেড়েছেন কাতারের আমির

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৩০ বার পঠিত

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে ঢাকা ত্যাগ করেছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কাতার আমিরের সফর দুই দেশের মধ্যে অসাধারণ সদিচ্ছা ও বোঝাপড়া তৈরি করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, সর্বোচ্চ পর্যায়ের এ সফরটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো সুসংহত এবং সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে উন্নীত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।

কাতারের আমির বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে ২২-২৩ এপ্রিল দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি সরকারি ও বেসরকারি সেক্টরের সদস্যদের সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যাতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আমির-ই দেওয়ান প্রধান, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী, কাতারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, কাতার চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’র (কিউআইএ) এশিয়া ও আফ্রিকা ইনভেস্টমেন্টের প্রধান, এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চের পরিচালক।

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন আমিরকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনারও দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এ বছরের জানুয়ারিতে দেশে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর, এটি ছিল রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রথম স্বাগতিক সফর। এই সফর বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তির উপলক্ষ সামনে রেখেও অনুষ্ঠিত হয়। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং কাতারি আমিরের নেতৃত্বে কাতারি প্রতিনিধিদল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার সময় উভয় পক্ষই দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রশংসা করে এবং বর্ধিত পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা, দু’দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং রাষ্ট্রীয়, ব্যবসা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সকল স্তরে সফর বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ককে আরও বাড়ানো ও এগিয়ে নেওয়ার পন্থা ও উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় যেসব বিষয় উঠে এসেছে- সেগুলো ছিল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, জনশক্তি, প্রতিরক্ষা, শিক্ষা, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা ইত্যাদি।

উভয়পক্ষ গাজা যুদ্ধ এবং মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনসহ পারস্পরিক স্বার্থের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতেও মতবিনিময় করেছে। উভয় নেতা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ফিলিস্তিনের সমস্যার টেকসই সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী বক্তব্যে একটি উন্নত জ্ঞান-ভিত্তিক বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ হিসাবে কাতারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং রূপান্তর এবং আমিরের নেতৃত্বে মধ্যস্থতা ও বহুপক্ষীয় কূটনীতিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার গভীরভাবে প্রশংসা করেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া কয়েকটি উপসাগরীয় দেশের অন্যতম হওয়ার জন্য কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

কাতারের আমির প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। তিনি বাংলাদেশকে একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে প্রশংসা করেন এবং কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ প্রসার ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশে সম্ভাবনার ক্ষেত্রে ব্যবসা অনুসন্ধানে আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমির কাতারের উন্নয়নে বাংলাদেশ প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকারও স্বীকৃতি দেন, যারা উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছেন।

এই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী, পেশাদার, নার্স, টেকনিশিয়ান, কেয়ারগিভার ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতারের আমিরকে অনুরোধ করেন। কাতারের আমির এতে ইতিবাচকভাবে সাড়া দেন।

মতবিনিময়কালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের চেম্বার সংস্থার মধ্যে একটি জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল (জেবিসি) গঠনকে স্বাগত জানান এবং ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা এবং সম্পৃক্ততার সুবিধার্থে ব্যবসায়ি়ক চক্রের জন্য ভিসা পদ্ধতি সহজ করার জন্য কাতারি পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কাতারি বিনিয়োগকারীদের এবং ব্যবসায়ীদের কক্সবাজারে পর্যটন খাত বিকাশ এবং তাদের জন্য নিবেদিত এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণের প্রস্তাব দেন।

কাতারের আমির ইইজেড এবং কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন যে তিনি কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (কিউআইএ) এবং কাতারের ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর করতে এবং প্রস্তাবিত খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে বলবেন। তিনি কাতারের ফ্রি ইকোনমিক জোন সম্পর্কেও বৈঠকে অবহিত করেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল পাঠানোর অনুরোধ জানান।

উভয় নেতা জ্বালানি খাতে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, যে উভয় পক্ষই অদূর ভবিষ্যতে অংশীদারত্বের পর্যায়ে সম্পৃক্ততাকে আরও এগিয়ে নিতে একসঙ্গে কাজ করছে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আগে উভয় নেতা একটি একান্ত বৈঠকেও করেন, যেখানে তারা পারস্পরিক স্বার্থ এবং অগ্রাধিকারের বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের নেতারা বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে মোট ১০টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।

উভয় নেতা কাতারের আমিরের নামে ইসিবি সার্কেল থেকে কালশী পয়েন্ট পর্যন্ত একটি বিশেষ এভিনিউ এবং রাজধানীর মিরপুরে একটি পার্কের নামকরণ ও উদ্বোধন প্রত্যক্ষ করেন।

আমির ও তার প্রতিনিধিদলের সদস্যরা বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন যেখানে তারা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন।

রাষ্ট্রপতি কাতারে ৩ লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগের জন্য কাতারের আমিরকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ ও আধা-দক্ষ কর্মী নিয়োগের অনুরোধ জানান।

পরে আমির বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পর তার সম্মানে রাষ্ট্রপতির দেওয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।

মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com