গত আড়াই মাসে প্রায় ২১ লাখ কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিয়েছেন করদাতারা। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজারের মতো টিআইএন নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ৪৩ সেবায় টিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতার কারণে কয়েক মাস ধরেই টিআইএন নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত সারাদেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৮৯ হাজার ৭৫। আড়াই মাস আগেই গত ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো টিআইএনধারীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। ঐদিন শেষে টিআইএনধারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ হাজার ৮৪৪।
এনবিআরের হিসাবে দেখা গেছে, গত দুই মাস প্রতিদিন গড়ে ২৮ হাজার ১৭৮ জন টিআইএন নিয়েছেন। গত নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসেও দৈনিক ১০-১২ হাজার টিআইএন ইস্যু হতো বলে এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান।
কর্মকর্তারা জানান, রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) ছাড়া এখন অনেক সরকারি-বেসরকারি সেবা পাওয়া যায় না। তাই করযোগ্য আয় না থাকা সত্ত্বেও এখন অনেককে বাধ্য হয়ে টিআইএন নিতে হচ্ছে।
এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান, ৪৩ ধরনের সরকারি–বেসরকারি সেবা গ্রহণে রিটার্ন জমা বাধ্যতামূলক করার ফল মিলছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ টিআইএন নিচ্ছেন। এটি ভালো উদ্যোগ।
৪৩ সেবার তালিকা-
চলতি অর্থবছরের আগে ৩৮ ধরনের সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তবে চলতি অর্থবছরে এর আওতা আরো বাড়িয়ে ৪৩টি সেবা করা হয়।
এই ৪৩টি সেবার মধ্যে অন্যতম হলো ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ আবেদন করলে; পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে; ক্রেডিট কার্ড নিলে; কোনো কোম্পানির পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার হলে; ব্যবসায় সমিতির সদস্য হলে; কারও সন্তান বা পোষ্য ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করলে; অস্ত্রের লাইসেন্স নিলে; উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হলে; চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ হিসেবে কাজ করলে; ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ ও নবায়ন করলে; সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সরকারি পরিষেবার সংযোগ নিতে হলে; ১০ লাখ টাকার বেশি মেয়াদি আমানত থাকলে; সরকার কর্মচারী ১৬ হাজার টাকার বেশি মূল বেতন পেলে; নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বাড়িভাড়া বা লিজ গ্রহণের সময় বাড়ির মালিকের; নির্দিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক সেবা বা পণ্য গ্রহণকালে ঐ পণ্য বা সেবা সরবরাহকারীর; ট্রাস্ট, তহবিল, ফাউন্ডেশন, এনজিও, ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী সংস্থা, সোসাইটি ও সমবায় সমিতির ব্যাংক হিসাব খুলতে ও চালু রাখতে; স্ট্যাম্প, কোর্ট ফি ও কার্টিজ পেপারে ভেন্ডার বা দলিল লেখক হিসেবে নিবন্ধন, লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি করতে বা বহাল রাখতে; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে এমন গঠিত কর্তৃপক্ষ বা অন্য সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভায় অনুমোদনের জন্য ভবন নকশার আবেদন দাখিলের সময়।