বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

কান্না থামছেই না ৭ মাসের সাবরিনের, খুঁজছে মাকে

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪
  • ৩২ বার পঠিত

বরগুনা প্রতিনিধি:

সাত মাস বয়সী সাবরিন। সে জানে না তার মা আর নেই। স্বজনদের কোলে চড়ে মায়ের খোঁজ করছে সে। তবে মাকে খুঁজে না পাওয়ায় তার কান্না থামছেই না। স্বজনরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে শান্ত করতে পারছে না। এমনকি বাবার কোলেও থামছে না সাবরিনের কান্না। একসঙ্গে পরিবারের ৭ সদস্যকে হারিয়েছে সে।

বরগুনার আমতলী উপজেলায় সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনায় ৭ মাস বয়সী শিশু সাবরিন খান বেঁচে ফিরলেও মা রাইতি খান নিহত হয়েছেন। শনিবার (২২ জুন) দুপুরে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের চাওড়া নামক এলাকার হলদিয়া হাটের সঙ্গে সংযুক্ত সেতু ভেঙে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মোট ৯ জন নিহত হয়েছে।

সরেজমিনে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা যায়, সাত মাস বয়সী অবুঝ শিশু সাবরিন স্বজনদের কোলে চড়ে মায়ের খোঁজ করছে। তবে মাকে খুঁজে না পাওয়ায় তার কান্না থামছেই না। স্বজনরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে শান্ত করতে পারছে না। এমনকি বাবার কোলেও থামছে না সাবরিনের কান্না।

বেঁচে যাওয়া শিশু সাবরিনের বাবা সোহেল খান জানান, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসে ছিল সাবরিন ও তার মা রাইতি। লোহার সেতু ভেঙে মাইক্রোবাসটি যখন নদীতে ডুবে যাচ্ছিল তখন রাইতি তখন কোল থেকে সাবরিনকে খালের ওপর ভাসমান কচুরিপানার মধ্যে ফেলে দেয়। পেছনে একটি অটোরিকশায় সোহেলসহ দুইজন আত্মীয় ছিলেন। তারাও পানিতে ডুবে যাচ্ছিলেন। সোহেল কোনোভাবে সাঁতরে ওপরে উঠে আসেন। এ সময় দেখেন কচুরিপানার ওপর সাবরিন। সঙ্গে সঙ্গে নিজের সন্তানকে পানিতে ভেসে থাকা কচুরিপানার ওপর থেকে উদ্ধার করেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, এভাবে আমার সবকিছু কেড়ে নিলা আল্লাহ! ছোট মেয়েটাকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে বাঁচব?

জানা যায়, কনে বাড়ি আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন থেকে পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছেলে বাড়িতে বউ ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মাইক্রোবাস ও অটোরিকশায় যাচ্ছিলেন কনে পক্ষের লোকজন। এ সময় উপজেলার ৫ নম্বর চাওড়া ইউনিয়ন এবং ৪ নম্বর হলদিয়া ইউনিয়নের সংযোগ সেতু হলদিয়া ব্রিজ ভেঙে একটি মাইক্রোবাস ও অটোরিকশা পড়ে যায় নদীতে। এ সময় মাইক্রোবাসের মধ্যে থাকা দুই শিশুসহ ৯ নারী নিহত হয়েছেন।

নিহতরা হলেন- মাদারীপুরের শিবচরের মুনী বেগম (৪০), তার ছোট মেয়ে তাহিয়া (৭), বড় মেয়ে তাসফিয়া (১১), একই এলাকার ফরিদা বেগম (৫৫), রাইতি (৩০), ফাতেমা আক্তার (৪০), রুবী বেগম (৪০), হলদিয়া গ্রামের জহিরুল ইসলামের মেয়ে হৃদি (৫) ও তার মা জাকিয়া বেগম (৩০)।

জীবিত উদ্ধার হওয়া মাহবুব খান বলেন, শুক্রবার আমরা ভাগনি হুমায়রা বেগমের বাড়ি হলদিয়া ইউনিয়নের গুরুদল গ্রামে যাই। সেখান থেকে একটি মাইক্রোবাসে শনিবার (২২ জুন) ভাগনি জামাইয়ের আমতলীর বাড়ির অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য রওনা করি। দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে সময় হলদিয়া বাজার সংলগ্ন একটি লোহার সেতু পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসটি মাঝ বরাবর আসার পর আকস্মিক সেতুটির ২০ ফুট ধরে ধসে কচুরিপানা ভর্তি খালে পড়ে যায়। এরপর আর কিছুই বলতে পারি না। জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালে। আল্লায় মোগো বাঁচাইলেও সব শ্যাষ অইয়া গ্যাছে।

আমতলী থানার ওসি কাজী সাখাওয়াত হোসেন তপু বলেন, ব্রিজ ভেঙে মাইক্রোবাস নদীতে ডুবে নিয়ে বিয়ের কনে পক্ষের ৯ জন মানুষ মারা গেছেন। নিহতদের আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, হালকা যান (ফুটওভার ব্রিজ) প্রকল্পের আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৮৫ মিটার এই লোহার সেতুটি নির্মিত হয়েছিল। প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। ১৯ বছর আগে নির্মিত সেতুটিতে চলাচলে সতর্কতা নোটিশ টাঙানো ছিল। সেতুটির দুই প্রান্তেই গাছে সতর্কীকরণ নোটিশ টাঙানো রয়েছে। তাতে লেখা রয়েছে, ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, ভারী যানবাহন চলাচল নিষেধ। সেটি উপেক্ষা করার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।

বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যদি ব্রিজ নির্মাণে কোনো অনিয়ম পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com