নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
১০ আগস্ট শনিবার পদত্যাগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নিজেই।
পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার জন্য দোয়া করবেন।
গত রোববার পর্যন্ত শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম দাপ্তরিক সফরে বিদেশে ছিলেন। গত সোমবারের সাধারণ ছুটির পর মঙ্গলবার থেকে দেশে থাকার পর একদিনও অফিস করেননি। এ পরিস্থিতিতে আজ তিনি পদত্যাগ করলেন।
করোনা আতঙ্কে ২০২০ সালের শুরুর দিকে শেয়ারবাজারে ভয়াবহ ধস নামলে লেনদেন বন্ধ করে দেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তার সঙ্গে কমিশনার হিসেবে যোগ দেন আরও তিনজন। বিএসইসির দায়িত্ব নিয়ে নতুন কমিশন টানা ৬৬ দিন বন্ধ থাকা শেয়ারবাজারে আবার লেনদেন চালু করেন ওই বছরের ৩১ মে।
বন্ধ থাকা লেনদেন চালু করার পাশাপাশি অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দেয় শিবলী কমিশন। অনিয়মে জড়িত থাকায় একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়। সতর্ক করা হয় সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)-কে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউজকে জরিমানার পাশাপাশি সতর্ক করা হয়। পরবর্তীতে আইসিবিকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বাতিল করা হয় এক ডজন দুর্বল কোম্পানির আইপিও।
এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের প্রশংসা অর্জন করেন শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম নেতৃত্বাধীন কমিশন। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারেও। করোনা মহামারির মধ্যেই ঘুরে দাঁড়ায় শেয়ারবাজার।
কিন্তু এরপর বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয় শিবলী কমিশন। সেই সঙ্গে শিবলী কমিশনের বিরুদ্ধে কারসাজি চক্রকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয় দরপতন ঠেকাতে ফ্লোর প্রাইস আরোপের মাধ্যমে।
ফ্লোর প্রাইস দিয়ে একদিকে কারসাজি চক্রকে সুযোগ করে দেওয়া হয়, অন্যদিকে আটকে রাখা হয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি স্থানীয় অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়েন।
এরপরও চলতি বছরের এপ্রিল মাসে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আরও চার বছরের জন্য বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয় সরকার। দ্বিতীয় দফায় চেয়ারম্যান হওয়ার পর আবারও কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন শিবলী। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ারবাজারে।
সর্বশেষ গত ৮ আগস্ট এক নির্দেশনায় সই করে বেক্সিমকোসহ ৬ কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেন শিবলী। এমন একসময় এই ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হলো যখন বিএসইসির চেয়ারম্যান অফিসে আসছেন না এবং কোনো কমিশন সভা হয়নি।
কমিশনের নতুন সিদ্ধান্তে রোববার থেকে বেক্সিমকো, খুলনা পাওয়ার ও শাহজিবাজার পাওয়ারের ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হবে। আর আগামী ১৪ আগস্ট থেকে বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামে ফ্লোর প্রাইস থাকবে না।
তবে বিএসইসির এই নির্দেশনার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ বিএসইসির ১৯৬৯ অধ্যাদেশের ২০এ ধারার অধীনে এ সংস্থার চেয়ারম্যান একা কোনো আদেশ বা নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না। এ ক্ষমতা শুধু কমিশনের।
১৯৯৩ সালের আইন অনুযায়ী কমিশন বলতে বোঝায়- বিএসইসি চেয়ারম্যান ও চার কমিশনারদের সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড। এই কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো- পূর্বনির্ধারিত এজেন্ডাসহ আগাম নোটিশে ডাকা কমিশন সভা এবং কোরাম পূর্ণ হওয়া সাপেক্ষে আলোচ্যসূচির ওপর আলোচনা সাপেক্ষে গৃহীত সিদ্ধান্ত।
কমিশনের সিদ্ধান্ত, আদেশ, নির্দেশনা বা নোটিশ চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে বা তার নির্দেশনায় কমিশনের অপর কোনো কর্মকর্তা প্রকাশ/জারি করতে পারেন।