মাসুদ পারভেজ (উত্তরা)ঃ কোটা সংস্কার দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিমানবন্দর মহাসড়কে নিরস্ত্র কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে ডেকে ডেকে পানি খাওয়ানো মীর মাহফুজুর রহমান “শহীদ মুগ্ধের”স্মরণে উত্তরায় নির্মিত হয়েছে মুগ্ধ মঞ্চ। এটি উত্তরা আজমপুর ৩/৭ নং সেক্টর রবিন্দ্র স্মরণী রোড তিন রাস্তার মোড় লাবাম্বার সামনে লেক পারে উম্মুক্ত স্থানে নির্মিত হয়।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ই জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন কুমিল্লা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছেলে মুগ্ধ।পানি লাগবে পানি,মুগ্ধের এই মুখের কথাটি কোটি কোটি মানুষের হূদয়ে মুগ্ধ হয়ে আছে। মুগ্ধ,আবু সাঈদ,আসিফ, রাফি,ওয়াসিম, আদনান,ফারুকসহ বুকপেতে দেওয়া হাজারো ছাত্র-জনতা যারা দিয়েছিল প্রাণ তাদের স্মরণে উত্তরার দেয়ালে দেয়ালে আল্পনা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের রক্তক্ষয়ী চিত্র, আন্দোলনে রক্ত ঝড়া শহিদের স্মরণে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে এঁকেছেন ছাত্র জনতার স্মৃতির প্রকৃতি। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের হরেক রকম গ্রাফিতি স্লোগান, দেয়াল লেখনি ও আল্পনার ছোঁয়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে পুরো উত্তরা।
মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের হাতে সেদিন পানির বোতল তুলে দিচ্ছিলেন মুগ্ধ।ঐ সময় দেখা যায়, পুলিশের ছোঁড়া টিয়ার গ্যাসে জ্বলতে থাকা চোখ মুছতে মুছতেও পানি পানি বলে ছুটে যাচ্ছিলেন সবার কাছে। ১৫ মিনিটের মাথায় সড়কে বিশ্রাম নেওয়ার সময় একটি বুলেট তার কপালে এসে বিধে শহীদ হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুগ্ধ। গত ১৮ই জুলাই বিমানবন্দর মহাসড়ক উত্তরা আজমপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর আগে ছাত্র-জনতাকে পানি খাওয়ানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ঐ সময় মুগ্ধের এই ভিডিওটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে আরো বেশি মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে উৎসাহিত করে।
গত ৫ই অক্টোবর শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসার পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত অনেক পরিবার এখন তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর জন্য জবাবদিহি চাইছে।
জানা যায়, গণিতে স্নাতক মুগ্ধ এমবিএ পড়ছিলেন, আর তার ছোট ভাই স্নিগ্ধ আইনে স্নাতক। খাওয়া ঘুমানো একসঙ্গে, পড়াশোনা থেকে শুরু করে পোশাক ভাগাভাগি, যমজ দুই ভাই মুগ্ধ এবং স্নিগ্ধ যেন জন্ম থেকেই ছিলেন অবিচ্ছেদ্য। তারা অনলাইন ফ্রিল্যান্সার হাব ফাইভারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং করছিলেন।
মুগ্ধের মৃত্যুর সময় তার গলায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড, হাতে ছিলো পানির বোতল। মুগ্ধ নিহত হওয়ার ঠিক দুইদিন আগে ১৬ই জুলাই রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয় আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর ভিডিওটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এই দুই মৃত্যু সারা দেশে কোটি কোটি মানুষের হূদয়ে দাগ কাটে। এর ফলে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মূলধারার আন্দোলনে পরিনত হয়েছিলো।