রোমানা রহমান (উত্তরা) ঃ একনেক প্রকল্পের ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা বাজেট কসাইবাড়ি-দক্ষিণখান সড়কে গত চার মাস যাবত উন্নয়ন কাজ বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায় মাসের পর মাস কসাইবাড়ী-কাঁচকুড়া সড়কে এলোপাতাড়ি ভাবে ড্রেনের পাইপ ও মাটির স্তুপ পড়ে আছে। মেইন রোডে পরে থাকা এসব পাইপ, মাটির স্তুপ,বড় বড় গর্ত ও বিভিন্ন মালামালের কারণে পথচারীদের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়াও দীর্ঘদিন সড়ক উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকায় এখানকার জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উত্তরা বিমানবন্দর রেলস্টেশন কসাইবাড়ি থেকে দক্ষিণখান হয়ে কাঁচকুড়া সড়কের উন্নয়ন কাজ ৪ মাস যাবত বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ ও স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও হাজার হাজার গার্মেন্টস কর্মী, সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারী ছাড়াও সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে রয়েছে। বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে চরম বিপাকে এখানকার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, এ সড়কের বেশির ভাগ অংশে পয়োনিষ্কাশন ড্রেন ও ফিড তৈরি করা হলেও অদৃশ্য কারণে গত ৪ মাস যাবত কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, অপরিকল্পিত খুঁড়াখুঁড়ি ও কাজের ধীর গতির কারণে কয়েক বছর যাবত এখানকার মানুষ বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। এসময় অসুস্থ ও বয়স্ক আবু সাঈদ চাচার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,অসুস্থ শরীরে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কুর্মীটোলা হাসপাতালে গিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে দক্ষিণখানের পুরো রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে উঠেছে,ঠিকভাবে হাঁটা ও যায় না, তবুও কষ্ট করেই হাসপাতালে গিয়েছেন।তিনি আরো বলেন এসড়কে চলাচল করতে সাধারণ মানুষের অনেক অসুবিধা। আজোয়া মিষ্টি দোকানের কর্মচারী মোকারাম হাসান বলেন, তাদের ব্যবসা অনেক খারাপ, আগের চেয়ে বেচা বিক্রি অর্ধেক হয়ে গেছে, ঐ সড়কের পাশে সবজি বিক্রেতা ইউসুফ বলেন, আমাদের অবস্থা ভালো না, রাস্তা ঘাটের কারণে মানুষ চলাচল কমে গেছে, তাছাড়া সবজি,কাঁচামাল নিয়ে এ সড়কে হাঁটা যায় না,তাই তাদের বেচা বিক্রি অনেক কমে গেছে।
কোকারিজ দোকানদার মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন,প্রতি মাসেই লোকসান গুনতে হয়। কেনা- বেচা আগের তুলনায় অর্ধেক হয়ে গেছে।সড়কের দুই পাশের অন্যান্য দোকানদাররা বলেন,লাখ লাখ টাকা অগ্রীম দিয়ে দোকান ভাড়া নিয়েছি, এখন দোকান ছাড়তেও পারি না, চালাতেও পারিনা। রাস্তা ঠিক না হওয়ার কারণে তারা প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছে।দক্ষিণখান বাজারের আরো কয়েকজন দোকানদার বলেন,রাস্তা কাটা কাটির কারণে মানুষ চলাচল করতে পারে না, আগের মতো কাস্টমার বাজারে আসেনা,বেচা-কেনা কম,লাভ ও হয় কম, পরিবার পরিজন নিয়ে তারা খুব কষ্টে দিন যাপন করছেন। তারা বলেন, দুই এক জায়গায় সড়কে কাজ শুরু হলেও পর্যাপ্ত জনবল দেখা যায় না। এসময় তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়ক উন্নয়নের দাবি জানান।
একটু ভারী বৃষ্টি হলেই ঢাকা-১৮ আসনের অন্তর্ভুক্ত উত্তরার ডুমনি ইউনিয়ন,বেরাইদ ইউনিয়ন, ভাটারা ইউনিয়ন,দক্ষিণখান ইউনিয়ন, উত্তরখান ইউনিয়ন, হরিরামপুর ইউনিয়ন ও সাঁতারকুল ইউনিয়নের প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে হাটুপানি জমে যায়।
এসময় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকে সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসগামীসহ স্কুল,কলেজও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। নতুন এ-১৮টি ওয়ার্ডের খানাখন্দভরা ভাঙা সড়ক গুলো বর্তমানে মানুষের চরম কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এসময়,এখানকার স্থানীয়রা জানান,মূল সড়কের পাশাপাশি শাখা রাস্তার ও বেহাল দশা। বৃষ্টি ছাড়াই নতুন ওয়ার্ড গুলোর অনেক জায়গায় ড্রেন থেকে ময়লা পানি উঠে রাস্তা তলিয়ে যাচ্ছে।
প্রথমবারের মতো স্বল্প মেয়াদে ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী নতুন ১৮টি ওয়ার্ডে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে উত্তরখান দক্ষিণখান এলাকার নতুন ৭ টি ওয়ার্ড সাবেক হরিরামপুর ইউনিয়নের ৩ টি ওয়ার্ডের শাখা রাস্তা গুলো ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে সড়ক গুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে, মনেই হয় না এগুলো সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা।
ঢাকা-১৮ আসনের নতুন ওয়ার্ড গুলোর রাস্তাঘাট খানাখন্দে এতোটাই বেহাল দশা হয়েছে সামান্য বৃষ্টিতে এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানায়,এ সব সমস্যার মধ্যেই প্রতিদিন পথ চলতে হচ্ছে নতুন ওয়ার্ডের সাধারণ জনগণকে ।এছাড়াও আভ্যন্তরিন রাস্তা গুলোতে কাঁদা মাটিতে পিচ্ছিল হওয়ায় অবস্থা এতোটাই খারাপ পায়ে হেঁটে চলাচল করা ও যায় না।এখানকার পাড়া মোহল্লার শাখা রাস্তা গুলো খুবই বিপদজনক হয়ে উঠেছে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় কোমর পানি হয়।
সরেজমিনে দেখা যায় রাজধানীর উত্তরখান দক্ষিণ খান, হরিরামপুর এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর একমাত্র ভরসা বেটারিচালিত অটোরিকশা। উত্তরা আবদুল্লাহপুর থেকে তেরমুখ, আজমপুর থেকে মাজার চৌরাস্তা হয়ে হেলাল মার্কেট চানপাড়া, কসাইবাড়ী রেললাইন থেকে দক্ষিণখান চেয়ারম্যান বাড়ি হয়ে দোবাদিয়া কাঁচকুড়া সড়কে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা চালাতেন।
এলাকার বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মেঘা প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় সড়কের জলাবদ্ধতা ও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে শত শত অটোরিকশা চালক মানবেতর জীবনযাপন করছে। একই কারণে এলাকার সহস্রাধিক গার্মেন্টস কর্মী ও বেটারীচালিত রিক্সা ও অটোরিক্সা চালক কর্মহীন হয়ে যাওয়ায় উত্তরখান দক্ষিণখান থানার নতুন ওয়ার্ড গুলোতে বেড়ে গেছে চুরি ডাকাতিসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ। একনেক প্রকল্পের ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দে নতুন১৮টি ওয়ার্ডকে মেইন স্টিমিংয়ের সাথে সংযুক্ত করার গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি ২৪ বিগ্রেড বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে ।