উত্তরা সংবাদ দাতা : বহুতল ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদনের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের নাম ভাঙ্গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে মল্লিক বিল্ডার্স এর মালিক সাহেব আলী মল্লিকের বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মল্লিক বিল্ডার্স এর মালিক সাহেব আলী মল্লিক ফ্ল্যাট বিক্রির ব্যবসা না করলেও তিনি জমি ক্রয় করে সেই জমিতে নির্মিত ভবনের ফ্ল্যাট অনুসারে জমির শেয়ার বিক্রি করেন। শেয়ার মালিকরা ভবন নির্মাণের কাজ করলেও রাজউক থেকে ভবন নির্মাণের জন্য নকশার অনুমোদনের কাজ করেন সাহেব আলী মল্লিক নিজেই।তিনি এ নকশা অনুমোদন করতে প্রতিটি ভবনে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা রাজউকের নকশা বাবদ খরচ দেখান। এই টাকা তিনি শেয়ার মালিকদের কাছ থেকে নিয়ে থাকেন। এ ঘটনায় শেয়ার ক্রেতাদের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
মল্লিক বিল্ডার্স গত তিন বছরে ফায়দাবাদ, দক্ষিনখান এলাকায় সাতটি ১০ তলা ভবনের শেয়ার বিক্রি করেন। এই সাতটি ভবনের রাজউকের অনুমোদন বাবদ রাজউক কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন সাহেব আলী মল্লিক।
মল্লিক বিল্ডার্স এর মালিক সাহেব আলীর বর্তমানে প্রজেক্টের ৪ টি ভবন নির্মানের কাজ চলছে ।এসময় সরেজমিনে তার প্রজেক্ট ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ১০ তলা ভবন নির্মাণে নগর ইমারত আইন লঙ্ঘন করে তিনি নকশার ব্যাত্যয় ঘটিয়ে রাজউককে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ভবনের অনুমোদন (প্লানপাশ) করাতে বেশুমার ব্যায় বিষয়ে জানতে চাইলে, সাহেব আলী মল্লিক ইনকিলাবকে বলেন,এতো বড় ভবনের অনুমোদন নিতে হলে খরচতো লাগেই। তাছাড়া কাজটা তিনি নিজে করেন না, রাজউকের লোক দিয়েই করান। ভবন নির্মানে রাজউক আইন মানছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইন মেনেই তিনি কাজ করছেন।
মল্লিক বিল্ডার্স এর ভবন নির্মানের অনিয়মের বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এর পরিচালক (জোন-০২) মোবারক হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না,তবে তার কম্পানীর বিরূদ্ধে এক লোক অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের পর বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। মল্লিক বিল্ডার্স রাজউকের নাম ভাঙ্গিয়ে কারো কাছ থেকে কোন ধরনের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকলেন তদন্ত সাপেক্ষে আমরা কঠিন ব্যবস্থা নিবো। এছাড়াও রাজউক আইন না মেনে নক্সার বিচ্যুতি ঘটিয়ে কোন ভবন নির্মাণ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমরা ইতি মধ্যে অবৈধ ভাবে নির্মিত ভবনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। অভিযানের পাশাপাশি জরিমানাসহ ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মল্লিক বিল্ডার্সের অবৈধ কাজের সাথে জড়িত রাজউক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর সাহেব আলী মল্লিক গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছুটা কোনঠাসা হলেও বর্তমানে সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে বহাল তবিয়তে চালাচ্ছে তার মল্লিক বিল্ডার্স এর অবৈধ কার্যক্রম। কোন ধরনের বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই গায়ের জোরে ট্রান্সমিটার, ফায়দাবাদ এলাকায় ৪ টি প্রজেক্টে বহুতল ভবনের কাজ করে যাচ্ছেন ভূমিদস্যু সাহেব আলী মল্লিক। জানা যায়, জমির শেয়ার বিক্রি করা তার মূল ব্যবসা এবং জমি ক্রয় করে বিভিন্ন লোকের কাছে শেয়ার বিক্রি করাই তার কাজ।
সাহেব আলী মল্লিকের বাড়ি গোপালগঞ্জ হওয়ায় সে কাউকে পরোয়া করেন না। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে সে বিভিন্ন এমপি মন্ত্রীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে ঐ সময় ফায়দাবাদ দক্ষিণখান এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। সে এতোটাই প্রভাবশালীও ভয়ংকর হয়ে উঠেছে তার প্রজেক্টে জমির শেয়ার ক্রয় কৃত ব্যক্তিরা মল্লিকের কাছে অসহায়। শেয়ার ক্রয় কৃতদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি ইনকিলাবকে বলেন বিগত ফ্যাসিষ্ট আ.লীগ সরকারের আমলে সাহেব আলী মল্লিক ক্ষমতার দাপটে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। নিজের অবৈধ সাম্রাজ্য রক্ষা করতে বর্তমানে সে কিছু রাজনৈতিক নেতার সাথে আঁতাত করছে। অর্থলোভী প্রতারক মল্লিক এতটাই বহুরূপী কখন কাকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় তাও রপ্ত করে রেখেছে।
সে শুধুমাত্র মল্লিক বিল্ডার্স ই-ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ই-ট্রেড লাইসেন্স এ উল্লেখ আছে তার ব্যবসার ধরন কনস্ট্রাকশন কাজে রড, সিমেন্ট, বিক্রয় ও সরবরাহ করিতে পারিবে।
বহুতল ভবন নির্মাণ করে ফ্লাট বিক্রয় করিতে পারবেন এমন কোন লাইসেন্স তিনি করেন নি। সূত্রে জানা যায়, তিনি বহুতল ভবন নির্মাণ করে শেয়ারের মাধ্যমে ফ্ল্যাট বিক্রয় করার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।