নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ:বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এতে কিছুটা হলেও আশার আলো উঁকি দিয়েছে।গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে দুই কার্যদিবসে দেশের শেয়ারবাজারে বড় উত্থান হয়।
দিনের পর দিন পুঁজি হারিয়ে যে বিনিয়োগকারীরা দু’চোখে অন্ধকার দেখছিলেন এখন তারাই আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন।
গত সপ্তাহের মাত্র দুই কার্যদিবসের উত্থানেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে মূলধন ফিরে পেয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে প্রধান মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ। অথচ এক সপ্তাহ আগেই বাজারটি প্রধান মূল্যসূচক হারিয়েছিল প্রায় ৫ শতাংশ। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রায় ১৫ হাজার কোট টাকা হাওয়া হয়ে যায়।
ভয়াবহ ওই দরপতনের কবলে পড়ে পুঁজি হারান লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। প্রতিনিয়তই বাড়ছিল বিনিয়োগকারীদের হাহুতাশ। পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর।
এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহের মাত্র দুই কার্যদিবসের উত্থান কিছুটা হলেও আতঙ্ক কেটেছে বিনিয়োগকারীদের। আর বিনিয়োগকারীদের এই আতঙ্ক কাটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের ঘোষণা।
গত সোমবার প্রণোদনা স্কিমের ৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির এই চিঠিতে দ্রুত সাড়াও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে প্রণোদনা স্কিমের টাকা ছাড় করা হয়েছে। এ অর্থ ২৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বিএসইসির এ উদ্যোগ নেয়ার পর মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১১১ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এরপর সংবাদ আসে শেয়ারবাজারে নির্ধারীত সীমার নিচে বিনিয়োগ থাকা ২০টি ব্যাংককে বিনিয়োগ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ সংবাদের পর বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়ে ৫৫ পয়েন্ট।
দুই কার্যদিবসের এমন বড় উত্থানের কারণে গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।
বাজার মূলধন বাড়লেও গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে যায়। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে ১৫৩টির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় বেড়েছে। অপরদিকে দাম কমেছে ১৮৫টির। আর দাম অপরিবর্তিত রয়েছে ১৬টির।
সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতন হলেও বেড়েছে মূল্যসূচক। গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বাড়ে ২ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৯১ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ১৫৮ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অর্থাৎ টানা দুই সপ্তাহ বড় পতনের পর কিছুটা বেড়েছে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক।
এ বিষয়ে বিনিয়োগকারী বেলাল হোসেন বলেন, শেয়ারবাজারে যেভাবে দরপতন হচ্ছিল, তাতে চোখে শুধুই অন্ধকার দেখছিলাম। বাজার ভালো হওয়ার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছিল না। এ পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহের দুই কার্যদিবসের উত্থান কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে। তবে আতঙ্ক এখনও কাটেনি। হারানো পুঁজি কতোদিনে ফিরে আসবে? নাকি আসবে না, সে বিষয়ে তো একটি দুশ্চিন্তা আছেই।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে বাড়ে ডিএসইর বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত সূচক ডিএসই-৩০। এ সূচকটি আগের সপ্তাহের তুলনায় ৬ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বা দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৮ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫১ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে কমে ৫২ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
তবে পতন অব্যাহত রয়েছে ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকের। গত সপ্তাহে সূচকটি কমে হয় ২ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বা দশমিক ২১ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ১৮ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে এ সূচকটি কমে ৩৮ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট বা ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এদিকে শেয়ারবাজারে কিছুটা উত্থানের পাশাপাশি বেড়েছে লেনদেনের গতি। গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয় ৩৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বাড়ে ৭২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বা ২২ দশমিক ১০ শতাংশ। আর গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১ হাজার ৬৩৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ৩৬১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
লেনদেনের পাশাপাশি ভালো কোম্পানি বা ‘এ’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। গত সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ছিল ‘এ’ গ্রুপভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের। তার আগের সপ্তাহে মোট লেনদেনের ৮০ দশমিক ১১ শতাংশ ছিল এই গ্রুপের দখলে। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে ভালো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ২ শতাংশের ওপরে বেড়েছে।
ভলো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন বাড়ার মধ্যে পঁচা কোম্পানি বা ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের লেনদেন কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের মোট লেনদেনে ‘জেড’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান কমে দাঁড়ায় দশমিক ৯০ শতাংশ, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ ছাড়া গত সপ্তাহের মোট লেনদেনের ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ ছিল ‘বি’ গ্রুপের দখলে। আর ‘এন’ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের অবদান রয়েছে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ।
গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ৮২ কোটি ৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা সপ্তাহজুড়ে হওয়া মোট লেনদেনের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার লেনদেন হয় ৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, যা সপ্তাহের মোট লেনদেনের ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ৫১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যাল।
লেনদেনে এরপর রয়েছে- বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বিকন ফার্মাসিউটিক্যাল, সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ, সী পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা এবং মুন্নু সিরামিক।