নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ:স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কিশোর গ্যাং আবির্ভাব হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যথেষ্ট সজাগ। অভিভাবকদের অনুরোধ করব, আপনাদের ছেলেমেয়েরা কে কী করছে লক্ষ করুন। কিশোর গ্যাংয়ে যাতে কেউ সম্পৃক্ত হতে না পারে সজাগ থাকুন।
আজ শনিবার রাজধানীর মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের কনভেনশন হলে মাদক-সন্ত্রাস, শিশু নির্যাতন, ইভটিজিং এবং সেলফোন-ইন্টারনেটের অপব্যবহার প্রতিরোধে করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার্স কল্যাণ সমিতি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অভিভাবক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে বলেন, এ কিশোররা সন্ধ্যার পর কেন বাইরে থাকবে? তারা পড়ার টেবিলে যাবে, সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে আসবে। এদের আমরা লক্ষ করছি, অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থাকছে। অনুরোধ করব অভিভাবকদের, আপনার সন্তান কোথায় খোঁজ রাখুন। কিশোর গ্যাংয়ে আপনার আমার ছেলেমেয়ে নাতিপুতি যেন না জড়ায়। সন্তান কে কী করছে খেয়াল করুন।
তিনি বলেন, যদি কেউ অপরাধ করে তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে, কিশোর হলেও। দেশে কিশোর অপরাধীদের জন্যও আইন রয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গির উত্থান দেখেছি। সন্ত্রাস-জঙ্গির উত্থান ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। অনেক দেশের চক্ষুশূল হয়েছি। আমাদের উন্নতি দেখে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলেছে। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে আমরা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। সব পেশার মানুষ একাত্ম হলো। মা তার জঙ্গি ছেলেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন। নিহত জঙ্গির মরদেহও নিতে কেউ আসেনি।
তিনি বলেন, আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনী জীবনবাজি রেখে কাজ করছেন। তবে সন্ত্রাস-জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি বলেও সেটা সম্ভব হয়েছে, কন্ট্রোলে রয়েছে। তবে এখনও মাঝে মাঝে দু-একটি ঘটনা ঘটিয়ে জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা তাদের অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করতে চায়, এখনও তারা জীবিত আছে। তবে সঠিক কাজ করছে বলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলছি, আমাদের কি ঐশির কথা মনে আছে? সে তার বাবা-মাকে হত্যা করেছিল। তার বাবা কিন্তু পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। এ ধরনের ঘটনা আমাদের প্রতিদিন সামনে আসে। মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছি।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত আইজিপি ড. মইনুর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর্থিক অগ্রগতি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটছে। এ কারণে আমাদের অগ্রগতি যতটা দৃশ্যমান হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। এখানে আমাদের ম্যানেজমেন্টের অভাব লক্ষণীয়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি খুব হতাশ হই যখন দেখি সন্তানকে জিপিএ-৫ পাওয়ানোর জন্য বাবা রাত জেগে অপেক্ষায় থাকে প্রশ্নপত্র পাওয়ার জন্য। শিক্ষক যখন শিক্ষার্থীকে ক্লাসের বাইরে নিজের কোচিং সেন্টারে ডাকে জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য। রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেখে হতাশ হই যখন দেখি কথা ও কাজে কোনো মিল নেই। সন্তানরা মূল্যবোধ শিখবে কী করে? যখন দেখে বাবার যে পেশা তার সাথে অর্থ উপার্জনের কোনো মিল নেই। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করতে হলে আগে নিজেদের মধ্যে মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।’
সাবেক আইজিপি আব্দুর রউফের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।