চট্টগ্রাম প্রতিনিধি: হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্য লগ্ন ‘শুভ মহালয়া’ আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর)। আজ থেকেই শুরু দেবীপক্ষের। শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আহ্বানে শুরু হবে মহালয়ার আয়োজন। আর এ ‘চণ্ডী’তেই রয়েছে দেবী দুর্গার সৃষ্টির বর্ণনা এবং দেবীর প্রশস্তি। শারদীয় দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো এ মহালয়া।
পুরাণ মতে, এ দিন দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। আজ থেকেই দুর্গাপূজার দিন গণনা শুরু। মহালয়া মানেই আর ৬ দিনের প্রতীক্ষা মায়ের পূজার। আর এ দিনেই দেবীর চক্ষুদান করা হয়।
আগামী ৪ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গাপূজা শুরু হলেও মূলত আজ থেকেই পূজার্থীরা দুর্গাপূজার আগমণধ্বনি শুরু হবে। দুর্গাপূজার এ সূচনার দিনটি সারাদেশে বেশ আড়ম্বরের সঙ্গে উদযাপিত হয়। এ দিনটি সাড়ম্বরে উদযাপনের লক্ষ্যে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের বিভিন্ন মণ্ডপ-মন্দির ও পূজা কমিটিগুলোর উদ্যোগে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা সমস্ত অশুভ শক্তি বিনাশের প্রতীক রূপে পূজিত। মহামায়া অসীম শক্তির উৎস। পুরাণ মতে, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বর অনুযায়ী কোনো মানুষ বা দেবতা কখনও মহিষাসুরকে হত্যা করতে পারবে না। ফলত অসীম ক্ষমতাশালী মহিষাসুর দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতারিত করে এবং বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের অধীশ্বর হতে চায়।
ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ী সম্মিলিতভাবে ‘মহামায়া’ এর রূপে অমোঘ নারী শক্তি সৃষ্টি করেন এবং দেবতাদের দশটি অস্ত্রে সুসজ্জিত সিংহবাহিনী দেবী দুর্গা ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত ও হত্যা করেন। মহালয়ার আর একটি দিক হচ্ছে এ মহালয়া তিথিতে যারা পিতৃ-মাতৃহীন তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মরণ করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করে অঞ্জলি প্রদান করেন।
সনাতন ধর্ম অনুসারে এ দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়। প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকে মহালয়া বলা হয়। মহালয় থেকে মহালয়া। পিতৃপক্ষের ও শেষদিন এটি।
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা সন্ন্যাসী পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত তীর্থভূমি মেধস মুনির আশ্রমে মহালয়া উপলক্ষে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ভোরে চণ্ডী পাঠ, শঙ্খের ধ্বনি ও ঢাকের বাদ্যে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানানো শুরু হয়।
প্রকৃতির অপরূপ সাজে সজ্জিত এ মেধস আশ্রমে আদিকালে দেবী ভগবতীর প্রথম পূজা হয়েছিল। ঋষি মেধসের নির্দেশে রাজ্য হারা সুরথ ও স্বজন বিতাড়িত সমাধি বৈশ্য দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী প্রতিমা গড়ে পূজা করেছিলেন। তবে সে পূজা বসন্তকালে হয়েছিল বলে তা বাসন্তী পূজা নামে প্রচলন ঘটে।
ত্রেতাযুগে রামচন্দ্র স্ত্রী সীতাকে উদ্ধারে ও লঙ্কার রাজা রাবণকে পরাজিত করতে শরৎকালে অকাল বোধনের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করেন। সে পূজা শারদীয়া দুর্গা পূজা হিসেবে খ্যাতি পায়।
কালের বিবর্তনে ঋষি মেধসের আশ্রম বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে ঋষি মেধস মুনি ও এ আশ্রমের কথা বিভিন্ন শ্রাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। আজ থেকে শতবছর আগে স্বামী বেদানন্দ যোগবলে বিলুপ্ত এ আশ্রম আবিষ্কার করেন।
প্রকৃতির অপরূপ নৈসর্গিক পরিবেশে কয়েকটি পাহাড়ের সন্নিবেশে এ তীর্থভূমিতে চলে দেবী দুর্গার আরাধনা। সমতল থেকে প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় রয়েছে মূল মন্দির। এছাড়াও রয়েছে চণ্ডী মন্দির, শিব মন্দির, সীতা মন্দির, তারা কালী মন্দির, কামাখ্যা মন্দির ও মানস সরোবর। মহালয়া উপলক্ষে আজ ভোর থেকে দেশি-বিদেশী পূজার্থী, দর্শনার্থী, পূণ্যার্থী ও ভক্তদের সমাগমে মুখরিত হয়ে উঠেছে মেধস আশ্রম।
এদিকে শুভ মহালয়া উপলক্ষে আজ শনিবার পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে দেবী পক্ষের শুভ মহালয়া নগরের জে এম সেন হলে অনুষ্ঠিত হবে। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে সকাল ১০টায় শ্রী শ্রী চণ্ডী পূজা, বিকেল ৪টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সংগঠনের পতাকা ও শ্বেত কপোত উড্ডয়ন, বিকেল সাড়ে ৪টায় চণ্ডী পাঠ, উদ্বোধনী সংগীত, গীতিনাট্যানুষ্ঠান ও সংগীতানুষ্ঠান, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন ও আশীর্বাদ। আশীর্বাদ প্রদান করবেন স্বামী সুদর্শানন্দ পুরী মহারাজ। এরপর আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
রাত ৯টায় ‘ওগো আমার আগমণী মা’ শীর্ষক ধর্মীয় সংগীতানুষ্ঠান পরিবেশন করবেন শিল্পী জয়ন্তী লালা, কল্পনা লালা, অপু বর্মন, রিটন ধর, রিষু তালুকদার, গৌরি নন্দী ও মন্দিরা চৌধুরী।