নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। এ জন্য উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সকাল ১০টা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সন্ধ্যার মধ্যে সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে বলেও জানান সচিব।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব সভায় বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় যদি সন্ধ্যা ৬টায় আঘাত করে তবে আমরা কয়টায় মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে পারি? দিনের মধ্যেই আমাদের সরিয়ে নিতে হবে।’
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিকেল ৫টার মধ্যে লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারলেই ভালো।’
সচিব বলেন, ‘কোথাও কোথাও নিয়ে যেতে ৩-৪ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে। তাহলে আমরা সব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সকাল ১০টা থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া শুরু করি। আশ্রয় কেন্দ্রে দরকার হয় শুকনো খাবার দেবে। তারা (জেলা প্রশাসন) ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে সন্ধ্যার মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসবে। তাহলে আমরা এ সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’
আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালকের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘এখন তাহলে ভোলা পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট জেলার মধ্যেই লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখি।’
পরিচালক বলেন, ‘আমার মনে হয় কক্সবাজারের দিকে আমাদের না করলেও চলবে। তবে হাতিয়া, সন্দ্বীপ ও নোয়াখালী এলাকার লোকজনকেও আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে হবে।’
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে কথা বলেছি, আজকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলার পর জানতে পারলাম, আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমরা এটা মোকাবেলা করতে পারব। মানুষ হতাহতের কোনো আমঙ্কা নেই। প্রাণিসম্পদও আমরা আশা করি রক্ষা করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘তবে খুলনা জেলায় ১১ হেক্টর জমির ধানে কেবল ফুল এসেছে। খুলনার ওপর দিয়ে ঘূর্ণিঝড় প্রবাহিত হলে হয়তো আমরা এগুলো রক্ষা করতে পারব না। আর ঘূর্ণিঝড় প্রবল হলে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ছাড়া আমাদের প্রস্তুতি ভালো।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে আমাদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আশ্রয় কেন্দ্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য ক্যাম্প আছে। সেখানে আলাদা কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা সবাই যেন তাদের অতিরিক্ত সহযোগিতা দিয়ে নির্দিষ্ট কক্ষে রাখতে পারি।’
আশ্রয় কেন্দ্রে হ্যাজাক বাতির মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান এনামুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে ম্যাসেজ দিতে চাই যে, যার যার ধর্মীয় উপসনালয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে এ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সার্বিক বিষয়গুলো আমরা সমন্বয় করছি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগে সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন সবাইকে সুসমন্বিতভাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা করার জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা ১৯টি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করলাম, আমরা দেখলাম তারা প্রস্তুত। আমাদের নজরে যেটা পড়ল তা হলো সবাই সম্পৃক্ত আছেন। আমাদের বলা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল। আমরা কোনো প্যানিক সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা এখন পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রর্থনা করতে পারি যাতে দুর্যোগটা প্রশমিত হয়।’
মুখ্য সচিব বলেন, ‘কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা রয়েছেন, তাদের বিষয়টিও এসেছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক অবহিত করলেন সেখানেও একটি সুসমন্বিত পদ্ধতি নেয়া হয়েছে। আমরা আরও নিরন্তর মনিটরিং করব। কোথাও যদি কোনো দুর্বলতা দেখা যায়, সেটা কাটিয়ে উঠা।’
‘আমরা সবাই আগামী দু’দিন বন্ধের মধ্যে অফিস করব। এবং জনগণের পাশে থাকব’ বলেন নজিবুর রহমান।
সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় তাদের প্রস্তুতির কথা জানান।