যশোর প্রতিনিধি: সপ্তাহ জুড়ে নাটকের মঞ্চে মেতে থাকল যশোর। সাতদিনে ভারত-বাংলাদেশের সাতটি দলের আটটি নাটকের সফল মঞ্চায়নে মুগ্ধ দর্শকরা উপভোগ করল দ্রোহ, প্রেম ও আবহমান ঐতিহ্যের শিল্পিত রূপ।
শুক্রবার রাতে পর্দা নামে এ আনন্দ আয়োজনের। বিবর্তন যশোর আয়োজিত তৃতীয় আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসবের সমাপনীতে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হয়। এছাড়াও বিকেলে ‘রাজনৈতিক, সামাজিক ও শৈল্পিকতায় নাট্যকর্মীদের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সন্ধ্যায় প্রথমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের যুগেরযাত্রী নাট্যদল শঙ্কর বসু ঠাকুরেরর রচিত চাঁদসওদাগার নাটকটি মঞ্চায়ন করে। রামকৃষ্ণ মন্ডল নির্দেশিত নাটকে অভিনয় করেন রামকৃষ্ণ মন্ডল, মৌসুমী মন্ডল, কৌশিক দত্ত, বিশ্বজিৎ দাস, সুদিত সাহা, পৃথা দাস।
অপরদিকে কোলকাতার অঙ্গন বেলঘরিয়ার নাটক ‘ফিরে পাওয়া’ মঞ্চস্থ হয়। বেবি সেনগুপ্তের রচনায় নাটকটিতে নির্দেশনা দিয়েছেন অভি সেনগুপ্ত। এতে অভিনয় করেছেন অভি সেনগুপ্ত, তপন বিশ্বাস, অরিন্দম মৈত্র, সায়ন সেনগুপ্ত, সৌমিতা বসু, সোহিনি সেনগুপ্ত, বেবি সেনগুপ্ত।
এছাড়াও শুক্রবার বিকেলে যশোর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাতদিনব্যাপী নাট্যোৎসবে ‘রাজনৈতিক, সামাজিক ও শৈল্পিকতায় নাট্যকর্মীদের দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কোলকাতার নাট্য গবেষক ও সমালোচক অংশুমান ভৌমিক।
এর আগে গত ১২ অক্টোবর যশোর শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয় আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন। উৎসবকে ঘিরে যশোরে নাট্যপ্রেমীদের মিলনমেলা বসে।
উৎসবের প্রথম দিন মঞ্চ আলোকিত করে ঢাকার জনপ্রিয় ‘লোক নাট্যদল’। ‘আমরা তিনজন’ নাটক নিয়ে দলটি মঞ্চ মাতায়। বুদ্ধদেব বসুর গল্প অবলম্বনে এই নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন লিয়াকত আলী লাকী। দ্বিতীয় দিন সন্ধ্যায় আয়োজক সংগঠন বিবর্তন যশোর মঞ্চস্থ করে পাহাড়ি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা নিয়ে নির্মিত আলোচিত নাটক ‘মাতব্রিং’। এ নাটকটি ২০১৮ সালের বিশ্ব থিয়েটার অলিম্পিয়ার্ডে অংশ নেয়ার সুযোগ পায়। সাধনা আহমেদের রচনায় এ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ইউসুফ হাসান অর্ক।
তৃতীয় দিন মঞ্চস্থ হয় ঢাকার জনপ্রিয় নাট্যদল ‘প্রাঙ্গণেমোর’র নাটক ‘ঈর্ষা’। সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের রচনায় এ নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেতা অনন্ত হীরা। চতুর্থ দিন চুয়াডাঙ্গার অনির্বাণ থিয়েটার মঞ্চস্থ করে ‘জিষ্ণুযারা’। এ নাটকের নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় করেছেন আনোয়ার হোসেন। আর পঞ্চম দিন ‘প্রাচ্য কলকাতা’র জনপ্রিয় নাটক ‘খেলাঘর’ মঞ্চস্থ হয়। হেনরিক ইবসেনের ‘এ ডলস হাউস’ গল্প অবলম্বনে খেলাঘরের নাট্যরূপ দিয়েছেন রতন কুমার দাস। নির্দেশনা দিয়েছেন কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার উৎসবের ষষ্ঠদিন পশ্চিমবঙ্গের ঋত্বিক বহরামপুর মঞ্চায়ন করে গ্রামীণ জীবনযাত্রার ওপর নির্মিত কাব্য গীতিনাট্য ‘চম্পাবতী’। অমর কবি জসীম উদ্দীনের ‘বেদের মেয়ে’ অবলম্বনে সৈয়দ শামসুল হক এই নাটকের নাট্যরূপ দিয়েছেন। মঞ্চভাবনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন বিপ্লব দে।
শুক্রবার সমাপনীদে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চন্দননগরের যুগেরযাত্রী নাট্যদল শঙ্কর বসু ঠাকুরেরর রচিত ‘চাঁদসওদাগার’ ও কোলকাতার অঙ্গন বেলঘরিয়ার নাটক ‘ফিরে পাওয়া’ মঞ্চস্থের মধ্য দিয়ে নাট্যোৎসব শেষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিবর্তনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উৎসবের অনুষ্ঠান উপ কমিটির আহ্বায়ক এইচ আর তুহিন জানান, কলকাতার অঞ্জনা বসু, বিপ্লব বন্দ্যোপাধায়, দেবশঙ্কর হালদার ও চৈতী ঘোষালের মতো জনপ্রিয় অভিনেতা যশোরের নাট্যমঞ্চ মাতিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা অনন্ত হীরা, রমিজ রাজু, নুনা আফরোজ ও লিয়াকত আলী লাকীদের অভিনয়ও দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
উৎসব কমিটির আহ্বায়ক ও বিবর্তন যশোরের সভাপতি সানোয়ার আলম খান দুলু জানান, বিবর্তন যশোর গত ১২ অক্টোবর ৩০ বছরে পা দিয়েছে। তিন দশকে পদার্পণ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এর আগে বিবর্তন দুইবার আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের আয়োজন করে। এবার তৃতীয়বারের মতো বির্বতনের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হলো।