নিজস্ব প্রতিবেদক: ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় মানুষকে সমবেত করার পেছনে উদ্দেশ্য কী- এমন প্রশ্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২০ অক্টোরব) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক-পূর্ব সূচনা বক্তব্যে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোলার বোরহানউদ্দিনে একটি হিন্দু ছেলের ফেসবুকের আইডি হ্যাক করে তার নামে কতগুলো মিথ্যাচার করা হয়েছে, যার ফেসবুক হ্যাক করা হয়েছে তার কাছে আবার ফোন করে ২০ হাজার টাকাও চেয়েছে। ২০ হাজার টাকা না দিলে তার ফেসবুক আইডিতে এমন কিছু কথা লিখবে সেটা তার জন্য ক্ষতি হবে- এ কথা শোনার পর পরই ওই হিন্দু ছেলেটি পুলিশ স্টেশনে গেছে। সে সেখানে একটা জিডিও করেছে।
তিনি বলেন, জিডি করা সত্ত্বেও সেখানে তাকে কিন্তু পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সাথে সাথে যে টেলিফোন করেছিল তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ফেসবুক আইডি হ্যাকিং হলে ফেসবুক অপারেটরদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা পুরো তথ্য জোগাড় করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে; যারা ফেসবুকে ওই হিন্দু ছেলেটির আইডি হ্যাকিং করে টাকা চেয়ে না পেয়ে যে কথাগুলো লিখেছে, সে তো একজন মুসলমান ছেলে। একজন মুসলমান হয়ে কীভাবে নবী করিম (সা.) নিয়ে এ ধরনের বাজে কথা লিখে? এবং আরেকজনকে জড়ানোর চেষ্টা করতে পারে? সেই কথা ধরে সেখানকার লোক একজন পীর সাহেব আছেন বেশ কিছু লোককে সে জড়ো করে। যখন পুলিশ তাদের বোঝাচ্ছে আপনারা এগুলো করবেন না, আমরা গ্রেফতার করেছি, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, তখন পুলিশের ওপর তারা চড়াও হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, পুলিশের ওপর চড়াও হলে পুলিশ নিজেদের বাঁচানোর জন্য একটা ঘরে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় নেয়ার পরও তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। সেখানে একজন এসআইয়ের গায়ে গুলি পর্যন্ত লাগে। সেই সময় সেখানে এসপি, ডিসি সবাই পৌঁছে যান। পুলিশকে রক্ষা করা এবং অন্যান্য সাধারণ মানুষ যারা ছিল সেখানে, যারা তাদের বোঝাতে গিয়েছিল তাদের রক্ষার জন্য গুলি ছোড়ে, ফলে বেশ অনেকজন আহত হয়। এর মধ্যে তিনজনের মৃত্যু কনফার্ম বলা হয়েছে আরেকজনের অবস্থা মুমূর্ষ।
তিনি বলেন, সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো, যে আইডিটা হ্যাকিং করল, এ ধরনের ঘটনা ঘটালো আর সেটাকে কেন্দ্র করে কী উদ্দেশ্য নিয়ে তারা সমবেত হলো এবং পুলিশের ওপর আক্রমণ করল, তাদের উদ্দেশ্যটা কী ছিল, সেটাই বড় কথা। এরপর থেকে দেখা যাচ্ছে, ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য। তাহলে এরা কারা? এদের উদ্দেশ্যটা কী?
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে। যদি নবী করিমের (সা.) প্রতি এতটুকু সম্মান থাকে তাহলে আরেকজনের ক্ষতি করার জন্য এ ধরনের জঘন্য কথা কীভাবে লেখে? এটাও আমার একটা প্রশ্ন। কাজেই আমি এ ব্যাপারে দেশবাসীকে বলব, সবাইকে ধৈর্য ধরতে। যারা এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চায় আমরা অন্তত তাদের উদ্দেশ্য খুঁজে বের করব এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেশে একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এ সব ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। যখনই দেখা যায় দেশটা একটু ভালোভাবে চলছে, অগ্রগতি হচ্ছে, তখনই একটা শ্রেণি আছে নানাভাবে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়। এইটা যেন কোনোভাবে করতে না পারে সেই জন্য আমি সাধারণ মানুষ তাদের কাছে সহযোগিতা চাই। দেশবাসীর কাছে আমার একটাই আহ্বান থাকবে, সবার ধৈর্য ধরতে হবে। কেউ যদি আমাদের নবী করিমের (সা.) বিরুদ্ধে কিছু লিখে থাকে নিশ্চয়ই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যের ক্ষতি করার জন্য যারা এ ধরনের কথা লিখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ব্যবস্থা নেব। টেকনোলজি মানুষ যেমন ব্যবহার করতে পারে আবার কেউ অপকর্ম করলে সেটা ধরার টেকনোলজিও আছে, এটা ধরা পড়বে। কারণ, ওই ছেলে যদি টেলিফোন করে টাকাটা না চাইতো তাহলে তাকে খুঁজে বের করা মুশকিল হতো। এ ধরনের ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। আরও যারা আছে আমরা তাদের গ্রেফতার করব। আমরা ফেসবুক অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগও করেছি। আরও তথ্য আমরা বের করতে পারব।
মিডিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব সময় সব জিনিস একেবারে ধারাবাহিক এমনভাবে প্রচার করবেন না, যা একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে। বরং যারা সত্যিকার অপরাধী তাদের দেখান। কেন এভাবে আরেকজনের আইডি চুরি করবে, তাকে শেষ করে তার কাছে চাঁদা চাইবে, আর টাকা দিতে না পারলে তার নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাবে? সেটাও চালাবে ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে বা মহানবীর বিরুদ্ধে, বরং এ অপরাধীদেরই শনাক্ত করা দরকার এবং তাদের জাতির সামনে তুলে ধরা দরকার। আমি এটুকুই বলব, এ ধরনের নানা চক্রান্ত আমার বিরুদ্ধে সবসময় হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল যেমন মানুষ ভোগ করছে, সেরকম এর কুফলও ভোগ করছে। নানা ধরনের বিপদে ফেলে দেয়। এটা যেন বিপদে ফেলতে না পারে অর্থাৎ গুজবে কান না দিয়ে সঠিক বিষয় জেনে নেয়া দরকার। যার যার ধর্ম তার তার কাছে। কাজেই সব ধর্মের মানুষ এ দেশে সম্মানের সাথে বাস করবে। এটাই আমাদের দেশের একটা নিয়ম এবং এটাই আমরা চাই যে, বাংলাদেশ যেন একটা শান্তিপূর্ণ অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে ওঠে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের যতগুলো সহযোগী সংগঠন আছে সবগুলোর যেন একে একে সম্মেলন হয়, সেই পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছি। অনেক সময় নানা কারণে সম্মেলন দীর্ঘায়িত হয়। আমরা দেশকে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ ক্ষেত্রে যারাই অপরাধী হবে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। কারণ, আমরা যখন দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই স্বাভাবিকভাবেই কিছু মানুষের ভেতরে একটা লোভের সৃষ্টি হয়। যার ফলাফল আমাদের সমাজটাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। কাজেই এ ধরনের অন্যায়-অবিচার বরদাস্ত করা হবে না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, সবাই ভালো থাকুক, সচ্ছল থাকুক। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হোন সেটা আমরা চাই। কিন্তু অন্যায়ভাবে যদি কেউ কিছু করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এটা একান্তভাবে প্রয়োজন বলে মনে করি। যখন একটা পরিবর্তন আসে তখন দেখা যায় কিছু মানুষ হঠাৎ রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়ে যায়। কিছু মানুষ গরিব থেকে যায়। এ আয় বৈষম্যটা যেন না থাকে সেদিকে দৃষ্টি রেখে আমরা একেবারে গ্রামের তৃণমূল মানুষেরও যেন আয় বৃদ্ধি পায়, তারাও যেন সচ্ছলভাবে থাকে, তারাও যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে -এ বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছি। অর্থাৎ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।