নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ম্যানেজিং কমিটিতে (এসএমসি) আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। সভাপতিসহ ১১ সদস্য বিশিষ্ট এসএমসির দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ বুধবার থেকে এটি কার্যকর করতে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে।
জানা গেছে, নীতিমালায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্বনিম্ন স্নাতক পাস নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় মনোনীত বিদ্যোৎসাহী সদস্যদেরও এসএসসি পাস হতে হবে। তবে অভিভাবক প্রতিনিধিসহ অন্য ক্যাটাগরির সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়নি। ফলে দেশের প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলের এসএমসি গঠনে স্নাতক পাস সভাপতি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ, এসএমসির ১১ সদস্যের ভোটেই সভাপতি নির্বাচিত হবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব মঙ্গলবার জাগো নিউজকে বলেন, এসএমসির সংশোধীত নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বুধবার এটি কার্যকর করা হতে পারে। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে তা কার্যকর করা হবে বলেও জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা এ সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১১ সদস্য বিশিষ্ট এসএমসি গঠিত হবে। তাতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপির সুপারিশে স্কুলে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্য থেকে একজন বিদ্যেৎসাহী নারী ও একজন পুরুষ সদস্য মনোনয়ন দেবেন প্রধান শিক্ষক। তাদের অবশ্যই এসএসসি পাস হতে হবে। বিদ্যালয়ের জমিদাতা বা তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্য থেকে একজন সদস্য মনোনীত হবেন। জমিদাতারা নিজেরা প্রতিনিধি মনোনীত করতে না পারলে উপজেলা শিক্ষা কমিটি নির্ধারণ করে দেবেন।
সংশ্লিষ্ট স্কুলের নিকটবর্তী সরকারি-বেসরকারি হাইস্কুলের একজন শিক্ষক কমিটির সদস্য মনোনীত হবেন। ওই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তা নির্ধারণ করে দেবেন। স্কুলের শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের ভোটে দুই জন নারী ও দুই জন পুরুষ সদস্য নির্বাচিত হবেন। স্কুলটি ইউনিয়ন বা পৌরসভার যে ওয়ার্ডে অবস্থিত সেখানকার ইউপি সদস্য বা কাউন্সিলর পদাধিকার বলে সদস্য মনোনীত হবেন। এই ১১ জনের ভোটে সভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচিত হবেন। সভাপতিকে অবশ্যই স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। একই স্কুলে টানা দুই বারের বেশি কোনো ব্যাক্তি সভাপতি হতে পারবেন না। কমিটির সদস্যরা সভাপতিকে লিখিতভাবে না জানিয়ে টানা তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল হবে। কমিটির মেয়াদ হবে তিন বছর। কোনো কারণে নির্ধারিত সময়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে ছয় মাসের জন্য এডহক কমিটি গঠন করতে হবে। এডহক কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।
কমিটির দায়িত্ব ও কর্তব্য : প্রতি বছর মে, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে স্কুল ব্যবস্থাপনা, শিক্ষার্থী উপস্থিতি ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের ওপর প্রতিবেদন উপজেলা বা থানা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দিতে হবে এসএমসিকে। শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সততা, নৈতিক শিক্ষা প্রদানে ভূমিকা রাখতে হবে। কমিটির সকল সদস্যকে প্রতি মাসের শেষ কর্ম দিবসে ক্লাস শেষে অন্তত এক ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও সুপারিশ শুনতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা কমিটির কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।
কমিটি স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে জনগণের কাছ থেকে জমি, ভবন আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, শিখন ও শেখানো সামগ্রী, শিক্ষা উপকরণ, নগদ অর্থ নিতে পারবে। দানকারীদের নাম প্রধান শিক্ষকের রুমে বোর্ডে প্রদর্শন করতে হবে। ভবন নির্মাণে স্কুলের খেলার মাঠ ও অন্যান্য স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে উপজেলা বা থানা প্রকৌশলীর প্রত্যায়ন নিতে হবে।
বলা হয়েছে, এসএমসি অনুমোদনের পরবর্তী তিন বছর দায়িত্ব পালন করবে। মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস আগে প্রধান শিক্ষক পরবর্তী কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবেন। সরকারি আদেশ অমান্য, দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, আর্থিক অনিয়ম এবং যেকোনো শৃঙ্খলাপরিপন্থী কারণে এসএমসি বাতিল করে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা কর্মকর্তা। এ প্রজ্ঞাপন জারির আগে গঠিত এসএমসি পূর্ণ মেয়াদ শেষ করতে পারবে। তবে প্রজ্ঞাপনটি পার্বত্য তিন জেলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।