নিজস্ব প্রতিবেদক:গত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মহাসমাবেশ করতে গিয়ে সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের হুমকি দেয়া হয়েছিল।
সমাপনী পরীক্ষা বর্জন করছেন না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর পুরনো পল্টনে মুক্তি ভবনে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সভা হয়। সভায় ৬৪ জেলার শিক্ষক প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব শামসুদ্দিন মাসুদ বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেনের সঙ্গে আমাদের গতকাল বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করার প্রস্তাব জানিয়েছি তাকে। সাক্ষাতের বিষয়টি সচিব আমাদের আশ্বস্ত করে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন। তার প্রতি আস্থা রেখে আমরা সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, সচিব আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, যদি আমরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের বিষয়টি সহজ হবে। দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের সাক্ষাতের দিন নির্ধারণ করা হবে বলেও আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সচিব মহোদয়। তাই আজ শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সভায় পরীক্ষা বর্জন থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
১৩ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের হুমকি দিয়েছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গত ২৩ অক্টোবর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এই হুমকি দেয়া হয়েছিল।
এই হুমকি দেয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন, সচিব আকরাম আল হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ডিজি ড. এ এফ এম মঞ্জুর কাদির ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আন্দোলনরত ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন।
সর্বশেষ ৭ নভেম্বর আন্দোলনরত ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম আল হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদেরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠকের শুরুতে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. আনিসুর রহমান গত ২৩ অক্টোবরের মহাসমাবেশ ও মহাসমাবেশ থেকে ঘোষিত সমাপনী পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচির প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এরপর ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রথম দাবি প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের যৌক্তিকতা তুলে ধরে ১৩ নভেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে সমাপনী পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা, নীতিনির্ধারণী চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সরকার, প্রধান মুখপাত্র বদরুল আলম ও যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম ঘোষিত কর্মসূচির পক্ষে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন।
শিক্ষকদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সচিব আকরাম আল হোসেন জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১২তম গ্রেডের প্রস্তাবনা অর্থ মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছিল। অর্থ মন্ত্রণালয় সেই প্রস্তাব ফেরত পাঠালে আমরা পরবর্তীতে অর্থ সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসি। অর্থ সচিব ১০, ১১ গ্রেডের পরিবর্তে প্রধান শিক্ষক ১১তম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড এবং নতুন সৃষ্ট সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের জন্য ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব দেন। এই মুহূর্তে এটা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে জানান তিনি। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করেন। তখন সচিব সমাপনী পরীক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে শিক্ষকদের সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানালে শিক্ষক নেতৃবৃন্দ দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের শর্ত জুড়ে দেন।
তারা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি যে গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করবেন তা শিক্ষকরা মেনে নেবেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক চাপিয়ে দেয়া বৈষম্যপূর্ণ কোনো গ্রেড তারা মেনে নেবেন না। সচিব ও ডিজির বার বার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক নেতারা সচিবকে বলেন ৮ নভেম্বর ঐক্য পরিষদের জেলা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা কর্মসূচির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন।