অনলাইন ডেস্ক: মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। মওলানা ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। পরে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তাকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়।
ত্রিশের দশকের শেষদিকে আসামের ঘাগমারায় বসবাসকারী বাঙালিদের স্বার্থরক্ষার জন্য যে আন্দোলন করেন, তার ছাপ আজীবন তার জীবনে জড়িয়ে যায়। ঐ এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাসানচরে বন্যার কবল থেকে বাঙালি কৃষকদের রক্ষার জন্য তিনি স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে একটি বাঁধ নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দেন। মানুষের পরম প্রিয়জনে পরিণত হন। সেই থেকেই তিনি হয়ে যান মওলানা ভাসানী।
তিনি ছিলেন একজন স্ব-শিক্ষিত ব্যক্তি। সারা রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রচুর প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন এবং বেশ কিছু সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনে জয়ীও হয়েছিলেন। তবে কখনও ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করেন নি। তাঁর নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল কৃষক শ্রমিক জনসাধারণ, যাদের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে গেছেন। এজন্যই তিনি মজলুম জননেতা।
ভাসানীর জন্ম ১৮৮০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ধনপাড়া গ্রামে। তাঁর পিতা ছিলেন হাজী শরাফত আলী খান। স্থানীয় স্কুল ও মাদ্রাসায় কয়েক বছর অধ্যয়ন ছাড়া তাঁর বিশেষ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না। তিনি কর্মজীবন শুরু করেন টাঙ্গাইলের কাগমারিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। সিরাজগঞ্জে জন্ম হলেও মওলানা ভাসানী তার জীবনের সিংহভাগই কাটিয়েছেন টাঙ্গাইলের সন্তোষে। তিনি কৈশোর-যৌবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী প্রদান করেছেন।
প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনীতিতে এক অবিস্মরণীয় নাম। গ্রামভিত্তিক এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর রাজনীতি। তাঁর নেতৃত্বের ভিত্তি ছিল সমাজে খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ, কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ জনগণ। কৃষক-শ্রমিক ও সাধারণ জনগণের অধিকার এবং স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর ছিল আদর্শিক ঐক্য ও রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা। শোষণ, বঞ্চনাহীন ও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের জন্য তিনি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।’
এ উপলক্ষে ঢাকা ও টাঙ্গাইলের সন্তোষে আজ বিস্তারিত কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তার মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা এবং দোয়া মাহফিল।
স্থানীয় প্রশাসন, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।