নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা সিটিতে বায়ু দূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, মূলত তিন কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেগুলো হলো- ইটভাটা, মোটরযানের কালো ধোঁয়া এবং যথেচ্ছ নির্মাণকাজ।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকার বায়ু ও শব্দ দূষণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, কীভাবে জনগণকে বায়ু দূষণ থেকে মুক্ত করতে পারি সে জন্য এ সভা ডাকা হয়েছে। ঢাকা সিটিতে বায়ু দূষণের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সরকারি বেসরকারি অবকাঠামো ও বিভিন্ন কাজে সমন্বয় করা প্রয়োজন। ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজের জন্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেস-হাইওয়েসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণের সময় পানি ছিটানো, যন্ত্রপাতি যত্রতত্র ফেলে না রাখা ও নির্মাণের ক্ষেত্র নির্ধারিত বেষ্টনীর মধ্যে আছে কি না তা দেখতে হবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বায়ু দূষণের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এ সমস্যা রোধে মূল দায়িত্ব পরিবেশ অধিদফতরের। ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান বাড়ানো হয়েছে।
শাহাব উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের উৎস নিয়ে চলতি বছরের মার্চে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংক। তাতে দেখা যায়, দেশে বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে- ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজ। আট বছর ধরে এ তিন উৎস ক্রমেই বাড়ছে।
২০১৩ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দেশের ইটভাটাগুলোর ওপর একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, দেশে ইটভাটার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৯৫টি। ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদফতরের জরিপে দেখা যায়, ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ৯০২টি হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৮৭টি ইটভাটা ঢাকা বিভাগের মধ্যে গড়ে উঠেছে। ওই গবেষণার তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে দেশে মোট যানবাহনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪।
মন্ত্রী জানান, প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন’র এ দেশীয় পরিচালক রাকিবুল আমিনের মতে, বায়ু দূষণ মোকাবিলার প্রথম কাজ হচ্ছে দূষণের উৎস বন্ধ করা। দ্বিতীয় কাজ হচ্ছে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলা এবং জলাশয়গুলো রক্ষা করা। এ দূষিত বায়ুর মধ্যে নগরের মানুষ কীভাবে নিরাপদ থাকবে, সে ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। তবে সবার আগে বায়ু দূষণকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কট হিসেবে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়নকাজ উম্মুক্তভাবে করার ফলে শহরের বাতাসে ধুলোবালির পরিমাণ বাড়ছে। ঢাকা শহরের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা/প্রতিষ্ঠান এবং বড় বড় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ অর্থাৎ এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, মেট্রোরেলসহ অন্যান্য প্রকল্প কার্যকর পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা প্রতিপালন, সঠিক ব্যবস্থাপনা অনুসরণপূর্বক মাটি, বালি ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহন ও সংরক্ষণ, কার্যকর কর্ম পরিবেশ রক্ষা করা, সময় মত রাস্তাঘাট সংস্কার ও মেরামত ও বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়মিত পানি ছিটানোসহ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
মন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নির্মাণ। প্রতিষ্ঠানসমূহ নির্মাণ সামগ্রী অর্থাৎ মাটি ও বালির একটি অংশ রাস্তার পড়ে যাচ্ছে, যা পরে বায়ু দূষণের সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা নিক্ষেপ, ড্রেন পরিষ্কার করে ময়লা ড্রেনের পাশেই দীর্ঘদিন রাখা ও সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য পরিবহনের সময় অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থাপনার ফলে একটি অংশ রাস্তার ফেলে দেয়া হচ্ছে। এ সব বর্জ্য ও ময়লা-আবর্জনার ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচলের ফলে বায়ু দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন ও নির্মাণ কার্যক্রমের বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক সুনিদিষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতি মাসে হাইকোর্ট বিভাগে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করতে হয়।