আদালত প্রতিবেদক: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শুরু হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন-বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তাকে সহযোগিতা করেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব নাথ। কায়সারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম মো. শাহজাহান। তার সঙ্গে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ও ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন।
সোমবার (২৫ নভেম্বর) রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মামলার পেপারবুক থেকে পাঠ শুরু করেন। পরে মামলার কাজ আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজ মামলার বাকি অংশ থেকে রাষ্ট্রপক্ষ আবারও শুনানি করবে বলে জাগো নিউজকে জানান ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেব নাথ।
সে হিসেবে মামলাটি আজ সুপ্রিম কোর্টের (কজলিস্ট) কার্যতালিকায় রয়েছে। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা কায়সারের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেন।
ওইদিন আসামি পক্ষের আইনজীবী জানান, সৈয়দ কায়সারের আপিল আবেদনের মামলায় প্রসিকিউশনের আনা সব কয়টি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়েছে। পরে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য গতকাল ২৫ নভেম্বর দিন ঠিক করে মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় মামলার শুনানি শুরু হয় সোমবার।
গত ৩০ অক্টোবর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের একই বেঞ্চে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। পরে ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল আমিন জানান, সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের আনা সব অভিযোগের বিষয়ে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল প্রস্তুতির জন্য সময় প্রার্থনা করায় ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন আদালত।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। সৈয়দ কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন আপিল আবেদনটি করেন। আপিলে খালাসের আরজিতে ৫৬টি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ৫০ পৃষ্ঠার মূল আপিলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি সংযুক্ত রয়েছে।
২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিজের নামে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে অপরাধ সংঘটিত করেন হবিগঞ্জ মহকুমার রাজাকার কমান্ডার ও শান্তি কমিটির সদস্য সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।
২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তাকে সর্বোচ্চ সাজাসহ ২২ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। তার বিরুদ্ধে একাত্তরে ১৫২ জনকে হত্যা-গণহত্যা, দুই নারীকে ধর্ষণ, পাঁচজনকে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায় এবং দুই শতাধিক বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন ও ষড়যন্ত্রের ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
এসব অভিযোগের মধ্যে ১৪টিই প্রমাণিত হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের মধ্যে প্রথমবারের মতো অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দণ্ড পান কায়সার। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও অপর নারী মাজেদাকে ধর্ষণের অপরাধ দুটি প্রমাণিত হয়।
২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা বাতিল ও বেকসুর খালাসের আরজি জানিয়ে আপিল করেন তার আইনজীবীরা।