নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর ক্ষোভে ফুঁসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। রাতেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। আজও দিনব্যপাী নানা কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
এরইমধ্যে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে আজ সকালে একাই অনশনে বসে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্র। অনশনে বসা ওই ছাত্রের নাম সিফাতুল ইসলাম। দর্শন বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের ছাত্র তিনি। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন আর কয়েকজন শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি ব্যানার নিয়ে আজ সোমবার সকাল থেকেই অনশন শুরু করেন সিফাত। পাশে হাতে লেখা একটা ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে অনশন।’
সিফাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার প্রতিবাদে আমরা অনশন পালন করছি। আমরা দ্রুত ধর্ষকদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
পরে অনশনে যোগ দেয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী শেখ কান্তা রেজা বলেন, ‘আমার কাছে ধর্ষণটাই মুখ্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এটি আমার কাছে পরের বিষয়। এরকম ধর্ষণের ঘটনা দেশে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। কিছুদিন পরে আবার তা ধামাচাপা পড়ে যায়। আমরা অনেক ঘটনায় দেখেছি, যেখানে ধর্ষক গ্রেফতার হওয়ার পর আবার জামিনে বেরিয়ে আসে।’
তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা এই জন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছি যে, এ ধরণের ঘটনা আরও ঘটবে। ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণে যারা জড়িত, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’
ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার রাতে রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নামার পর এ ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী জানিয়েছেন, আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল হাই জানান, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বর্তমানে ঢামেকের ওএসসিসিতে চিকিৎসাধীন।
ঢাবি রোকেয়া হলের ওই শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ওই ছাত্রীর বয়স ২০ থেকে ২২-এর মধ্যে বলে জানা গেছে। ধর্ষণের সময় তাকে মারধরও করা হয়। তার শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানিয়েছেন, কুর্মিটোলা এলাকায় নামার পর অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন তাঁর মুখ চেপে ধরে। এ সময় তাকে মারধরও করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। অচেতন অবস্থায়ই তাঁকে ধর্ষণ করা হয়।
পরে রাত ১০টার দিকে চেতনা ফেরার পর তিনি সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান। বান্ধবীকে ঘটনা জানান। এরপর সহপাঠীরা তাঁকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন। পরে তাঁকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
এদিকে ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার ক্যাম্পাসে বিভিন্ন প্রতিবাদী কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। সকাল সাড়ে ১০টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ।
সকাল ১১টায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন শামসুন্নাহার হলের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি। ফেসবুকের একটি ইভেন্টের মাধ্যমে তিনি এ ডাক দেন। ইমির ডাকা এ প্রতিবাদী কর্মসূচিতে অংশ নেবে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
এই প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহবায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান।