অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : মহামারি করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশে এরইমধ্যে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হয়েছে। বাংলাদেশসহ বিশ্ব পরিস্থিতি প্রায় একই রকম। বড় সংকটের মুখে পোশাক খাত। কর্ম হারানোর ঝুঁকিতে শ্রমিক। এ অবস্থায় শ্রমঘন শিল্প খাতটি টিকিয়ে রাখা জরুরি।
তাই এ সংকটময় মুহূর্তে ক্রয়াদেশ স্থগিত না করে চুক্তির শর্ত যথাযত পরিপালনের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড ও পোশাক ব্যবসায়ী ক্রেতাদের কাছে দাবি জানিয়েছে এশিয়া অঞ্চলের বাংলাদেশ, চীন, পাকিস্তান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের ৯টি পোশাক উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক সংগঠন।
স্টার নেটওয়ার্কের সদস্যভুক্ত সংগঠনগুলো এক যৌথ বিবৃতিতে তৈরি পোশাকের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড খুচরা বিক্রেতাদের এবং ব্যবসায়ীদের কাছে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে।
বুধবার (০৮ এপ্রিল) বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সংগঠনগুলো হলো- বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), চীনের চায়না ন্যাশনাল টেক্সটাইল এবং অ্যাপারিল কাউন্সিল (সিএনটিএসি),কম্বোডিয়ার গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (জিএমএসি), মিয়ানমার গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এমজিএমএ),পাকিস্তান হোসিয়ারি গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিএইচএমএ), পাকিস্তান টেক্সটাইল এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (পিটিইএ), তোয়ালে ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব পাকিস্তান (টিএমএ) এবং ভিয়েতনাম টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (ভিটাস)।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর প্রকোপের সময়ে বিশ্বের গার্মেন্টস খাতের সংকট থেকে বাঁচতে ও পুনরুদ্ধার করতে আরো দায়িত্বশীল হওয়ার সময় এসেছে। কারণ দিনশেষে লাখ লাখ শ্রমিকের মৌলিক অধিকার এবং তাদের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের ওপর এর ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলবে। শ্রম অধিকার, সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং টেকসই সরবরাহ চেইনের প্রতি বৈশ্বিক ব্যবসায়ের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং সম্মান দেখানোর এখনই সময়।
বিষয়টি মাথায় রেখে গ্লোবাল ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতাদের এবং ব্যবসায়ীদের প্রতি টেকসই টেক্সটাইল অব এশিয়ান অঞ্চলের (স্টার নেটওয়ার্ক) সদস্যদের ৬ উৎপাদনকারী এবং রপ্তানিকারক দেশ থেকে নয় টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন কয়েকটি দাবি জানিয়েছে।
দাবিগুলোর মধ্য রয়েছে-
উল্লেখযোগ্য ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সাপ্লাই চেইনে শ্রমিক ও ছোট ব্যবসার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করা।
ক্রয় চুক্তির শর্তগুলো সম্মান ও দায়বদ্ধতা সঙ্গে পালন করা এবং মূল্য বা অর্থ দেওয়ার শর্তগুলো ফের আলোচনা করা।
শিপমেন্ট নেওয়া এবং ইতোমধ্যে উৎপাদিত এবং বর্তমানে প্রস্তুত সামগ্রী বাতিল না করে অর্থ দেওয়ার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়া।
যদি উৎপাদন বা বিতরণ স্থগিত বা বাতিল হয়ে থাকলে শ্রমিকদের বেতন ও পণ্য সরবরাহকারীদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
এ মূহূর্তে পণ্য সরবরাহে বিলম্বের জন্য সরবরাহকারীদের ওপর কোনো দায়বদ্ধতা না রাখা এবং এ জাতীয় বিলম্বের জন্য কোনও ক্ষতিপূরণ দাবি না করা।
অহেতুক আদেশ ও অপ্রয়োজনীয় পরিদর্শন এবং নিরীক্ষণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি করে পণ্য সরবরাহকারীদের ওপর অনুচিত চাপ না দেওয়া ।
স্থানীয় পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করা।
সমস্যার পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান নিশ্চিত করতে সদা সংলাপ এবং সহযোগী মনোভাব অবলম্বন করা।
ব্যবসায়ী অংশীদারদের যথাসম্ভব সমর্থন করা। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়ীক ধারাবাহিকতা রক্ষায় এক হওয়া।
বিবৃতিতে সংকট কাটাতে বিশ্বব্যাপী সব দায়িত্বশীল ক্রেতার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে এবং হাঁটতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানায় সংগঠনগুলো।