নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: সাড়ে চার মাসের মাথায় এসে মন্ত্রিসভায় দপ্তর ছোটখাটো রদবদল। তবে এর আকস্মিকতাটা বিস্ময় জাগানিয়া। কারণ, কারো দপ্তর পাল্টাতে পারে বা দায়িত্ব পুনর্বণ্টন হতে পারে, এই বিষয়টি আলোচনাতেই ছিল না।
এর মধ্যে রবিবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম স্বাক্ষরিত পরিপত্রে মন্ত্রিসভার তিন সদসস্যের দায়িত্ব পুনর্বণ্টনের সিদ্ধান্ত জানা যায়। এর তিনটিই চমক। তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হারিয়েছেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি এখন থেকে কেবল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী থাকছেন। আইসিটি মন্ত্রণালয় দেখবেন জুনাইদ আহমেদ পলক।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় হারিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি কেবল স্থানীয় সরকার বিভাগ দেখবেন। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় দেখবেন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।
আর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে। তিনি এখন থেকে বসবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ে।
হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন?- সরকার বা সরকারি দলের পক্ষ থেকে কোনো ব্যাখ্যা কাউকে দেওয়া হয়নি। তবে সরকারের সূত্রগুলো বলছে, তাজুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় তার দায়িত্ব কিছুটা কমানো হয়েছে। মোস্তাফা জব্বারের সাম্প্রতিক কিছু বক্তব্যে সরকারের সমালোচনা হচ্ছিল। আর মুরাদ হাসান সম্প্রতি চিকিৎসকদের সমালোচনা করার পর ডাক্তাররা তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছিল।
গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ নেয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মন্ত্রিসভা। আগের দুই মেয়াদে শরিক দলগুলো থেকে মন্ত্রী রাখলেও এবার প্রথম কেবল আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভা গঠন করেন বঙ্গবন্ধু-কন্যা। আর সদস্য হিসেবে তিনি যাদের নির্বাচন করেন, সেটাও ছিল চমক। তাজুল ইসলামের এলজিআরডি এরই একটি অংশ। মন্ত্রিসভায় এবার নতুন মুখ ছিল ৩১ জন। পুরোনো মন্ত্রীদের মধ্যে বাদ দেয়া হয়েছিল ৩৬ জনকে।
মন্ত্রীদের দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুনর্বিন্যাস করে এই বণ্টন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদের কাজের মূল্যায়ন করবেন, এই বিষয়টি নানা সময় জানানো হয়েছিল। তবে মূল্যায়নের প্রক্রিয়া কেমন হবে তার এর ফলাফল কী হবে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। এর মধ্যে হঠাৎ সরকারের এই সিদ্ধান্ত এলো।
তাজুল ইসলাম বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। সম্প্রতি তিনি সিঙ্গাপুরে বাইপাস সার্জারি করিয়েছেন। এখনো দেশে ফেরেননি। শারীরিক অবস্থার কারণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা বেশ কঠিন ছিল। মন্ত্রীর অবর্তমানে প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যই গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো দেখতেন। তিনি জানিয়েছেন, যেসব ফাইল তার এখতিয়ারের বাইরে ছিল, সেগুলো তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। তবে এখন থেকে তারও বেশ কিছু ফাইল দেখার এখতিয়ার তৈরি হলো।
সরকারের গত মেয়াদের শেষ দিকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মোস্তাফা জব্বার। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করে আসছেন। তার যোগ দেওয়ার আগে এই মন্ত্রণালয় সামলাতেন তারানা হালিম ও জুনাইদ আহমেদ পলক। জব্বার এই মন্ত্রণালয়ে যোগ দেওয়ার পর তারানাকে তথ্যে পাঠানো হয়। এরপর থেকে জব্বার পূর্ণ মন্ত্রী এবং পলক তার ডেপুটি হিসেবে কাজ করছিলেন।
জব্বার মন্ত্রী হওয়ার পর আইসিটি নিয়ে আলোচিত তেমন কিছু করেছেন বা দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন এনেছেন, এমন তথ্য মেলেনি। তবে ৩১ জন মন্ত্রিত্ব হারালেও তিনি তার পদ ধরে রাখতে পারেন। যদিও মন্ত্রণালয়ে তার সঙ্গে পলকের মিথস্ক্রিয়াটা ভালো ছিল না বলেই আলোচনা আছে। যদিও এ নিয়ে দুইজনের কেউ মুখ খুলেননি।
জব্বার বলেন, ‘বিষয়টি (দায়িত্ব পুনর্বণ্টন) সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর। তিনি কীভাবে চালাবেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমি এতদিন দায়িত্ব পালন করছিলাম দুটি বিভাগের। আমার আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। এখন যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেখানেও আন্তরিকভাবে কাজ করে যাব।’
বিজয় বাংলা কিবোর্ডের উদ্ভাবক মোস্তাফা জব্বার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি ছিলেন। এর আগে কয়েক দফা তিনি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নাটোর-৩ (সিংড়া) আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এই আসন থেকে টানা তৃতীয়বারের সংসদ সদস্য।
মুরাদ হাসান নিজে চিকিৎসক। দায়িত্বও পান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের। তবে পূর্ণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের সঙ্গে তার দূরত্ব ছিল। চাউর আছে, প্রতিমন্ত্রীকে না জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ফাইল স্বাক্ষর করতেন। পরে প্রতিমন্ত্রীকেও সই করতে বলতেন। এ ছাড়াও চিকিৎসকদের বদলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক কাজ মন্ত্রী নিজে করতেন।
আবার স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে বড় একটি মেডিকেল ব্যবসায়ী গ্রুপ নাখোশ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে অভিযোগও করা হয়েছিল। প্রতিমন্ত্রীর ইমেজ ভালো থাকলেও ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীও অখুশি হন। আবার সম্প্রতি ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মুর্তজাকে আক্রমণ করে কথা বলায় চিকিসকদের কঠোর সমালোচনা করেন মুরাদ। এতেও তিনি একটি গোষ্ঠীর রোষানলে পড়েন।
মুরাদ হাসান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালেও তিনি একই আসনে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার বাবা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করেছেন।