ক্রীড়া প্রতিবেদক : ২১ বছর আগে-পরের ঘটনা। একেবারে একাল-সেকাল। তবে দুই অর্জনের জন্য ১৭-ই মে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য সব সময় নতুন, চিরসজীব। প্রথম পাওয়ার আনন্দগুলোতে এমন-ই হয়। স্মৃতিতে অম্লাণ।
তখন সময়টা ছিল ১৯৯৮ সালের ১৭ মে। রঙিণ পোশাকে বাংলাদেশ জিতল প্রথম ওয়ানডে। ঠিক ২১ বছর পর ঠিক সেদিন-ই রঙিণ পোশাকে বাংলাদেশের শোকেসে আসল প্রথম শিরোপা। অথচ এর মাঝে কতবার সুযোগ এসেছে। কিন্তু একবারও ‘চ্যাম্পিয়ন’ লেখা বোর্ডের সামনে উল্লাস করতে পারেনি টাইগাররা। তাইতো একই দিনে দুই প্রাপ্তিতে উদ্ভাসিত ১৭-ই মে।
১৯৯৮ সালের ১৭ মে ত্রিদেশীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি বাংলাদেশ ও কেনিয়া। ভারতের বিপক্ষে হেরে শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে কেনিয়াকে হারিয়ে অঘটনের জন্ম দেয়। কেনিয়ার ওই দলে ছিলেন স্টিভ টিকোলো, মারুসি ওডাম্বে, আসিফ সুজি, মার্টিন সুজিরা।
ওয়ানডে ক্রিকেটে তারা ছিল যথেষ্ট পরাক্রমশালী। কিন্তু দুর্বার বাংলাদেশের সামনে সেদিন পারেনি আফ্রিকার দেশটি। আকরাম খানের হাত ধরে প্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
হায়দরাবাদে আগে ব্যাটিং করে ২৩৬ রানে আটকে যায় কেনিয়া। জবাবে ১২ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। বল হাতে ৩ উইকেট আর ব্যাট হাতে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে মোহাম্মদ রফিক পেয়েছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।
ওই জয়ের পর কত সাফল্য এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কত ব্যর্থতার, কত দুঃস্বপ্নের গল্পও আছে জড়িয়ে। এই যেমন, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রঙিনে পোশাকে দুই ফরম্যাট মিলিয়ে মোট ছয়টি ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশ। কী আশ্চর্য্য, ছয় ফাইনালের একটিতেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রতিটি ফাইনালে দুঃস্বপ্ন ফিরে আসতো প্রেতের মতো, অশরীরী হয়ে।
কিন্তু ২০১৯ সালের ১৭-ই মে সেই গোরো ছুটায় বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। বৃষ্টিতে ৫০ ওভারের ম্যাচ নেমে আসে ২৪ ওভারে। তাতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ উইকেট হারিয়ে তোলে ১৫২ রান। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশের লক্ষ্য ২১০!
বেরসিক বৃষ্টিতে পাগলাটে লক্ষ্য পেয়েও আত্মবিশ্বাস হারায় না বাংলাদেশ। হারায় না বলেই তো ৭ বল আগে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সবটাই যে সৌম্য আর মোসাদ্দেকের অবদান। শুরুর ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন সৌম্য। শেষটা রাঙান মোসাদ্দেক। সৌম্যর ৪১ বলে ৬৬ রানের ইনিংসটি পুরো বাংলাদেশকে শিরোপা জয়ের আশায় স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। আর মোসাদ্দেকের ২৪ বলে ৫২ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে জয়ের পথ সহজেই পাড়ি দেয় বাংলাদেশ। ২০ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে বাংলাদেশের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন মোসাদ্দেক। পেয়েছিলেন ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও। আর সৌম্যর হাতে উঠেছিল ফাউন্ডেশন অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার।
২১ বছর আগে-পরে একই দিনে যে দুই প্রাপ্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটে জড়িয়েছে তা সত্যিই বিশাল, অসাধারণ, অসামান্য। তাইতো ১৭-ই মে ক্রিকেটপ্রেমিদের হৃদয়ের খুব কাছের।