ডেস্ক: অল ফর ওয়ান ফাউন্ডেশন একটি বাংলাদেশ ভিত্তিক দাতা প্রতিষ্ঠান যেটি মূলত স্বাস্থ্য এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। কিন্তু তাছাড়াও বলাবাহুল্য যে আমাদের কর্মক্ষেত্রের পরিধি আরো সুবিশাল। কোভিড- ১৯ একটি পৃথিবীব্যাপী সঙ্কট এবং পুরো পৃথিবী এই মুহূর্তে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই মর্মে দেশের সর্বাধিক সুবিধা বঞ্চিতদের সহযোগিতার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তারা। তাদের নেয়া মুখ্য তিনটি উদ্যোগ হলো:
১. ৪০০০ মানুষের জন্য মাসিক আহারের ব্যবস্থা আমরা ইতোমধ্যে ৪০০০ মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করেছেন যারা এই দুর্যোগের কারণে ভুক্তভোগী হয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে ৩৬৭ জন যৌনকর্মী, ১০০ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের নিম্নবিত্ত মানুষ, ৪০২ জন প্রতিবন্ধী, ৯২ জন হিজড়া, ৫০ জন চা বাগানের কর্মী, চিনির কারখানায় নিয়োজিত ১২০ টি পরিবার, ২২০ জন আদিবাসী এবং বাকি সকলে হলো দিন মজুর এবং হতদরিদ্র মানুষ।
২. ঘরোয়া সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টা ঘরোয়া সহিংসতা এই লকডাউনে একেবারে শীর্ষে পৌঁছে গেছে। ঘরোয়া সহিংসতাকে আমরা শারীরিক, মানসিক এবং আক্ষরিক অবমাননা, এই তিন ভাবে অর্থনিরুপন করছেন। যেখানে অনেকেই পরিবারের সাথে একই ছাদের নিচে বসবাসে স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছে, সেখানে আবার অনেক পরিবারের চিত্রটিই আশাব্যঞ্জক নয়।পৃথিবীব্যাপী এই মহামারীর সময় বাসায় অবস্থান করার ফলে প্রচন্ড মানসিক চাপের সৃষ্টি হচ্ছে। চিন্তা করুন যাদের আপনি প্রচন্ড ভয় পান তাদের সাথে আপনি এই মুহূর্তে বাসায় বন্দি আছেন! পত্রিকার পাতা উল্টালে কিংবা টেলিভিশন এর চ্যানেল পাল্টালে এমন ঘরোয়া নির্যাতনের অসংখ্য অমানুষিক ঘটনা চোখে পরে। আমরা এই পরিস্থিতির গাম্ভীর্য বুঝি। সেইজন্য তারা আইনগত এবং মানসিক সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করছেন। তারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তাদের ঘটনা গুলো শুনে তাদের সহায়তা এবং শান্তনা প্রদান করছেন। তারা তাদের দানগ্রহীতা এবং অন্যান্য নারীদের কাছ থেকে অসংখ্য সাহায্য বার্তা পেয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন অনেক নারীকে তার শশুর বাসায় বসবাসের ফলে নানান প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হচ্ছে, যেখানে তাদের বাড়ি থেকে অফিস এর কাজ করা সত্ত্বেও প্রত্যাশা করা হচ্ছে যে তারা গৃহস্থালির যাবতীয় কাজ করবে। গৃহকর্মীর অবর্তমানে শশুর বাড়ির অন্য কোনো সদস্য এরূপ অবস্থায় এগিয়ে আসছে না। যার ফলে পরিবারের বৌটিকে কাজের ঘানি একাই টানতে হচ্ছে।নিজের বাবার বাড়ি থেকে দূরে থেকে শশুর বাড়ির সকল কাজের দায়িত্ব একাই বাধ্যতামূলকভাবে ঘাড়ে নিয়ে, যখন তখন তাদের বদমেজাজের ঘোর সংযোজিত অধিবৃত্তি হিসেবে পেয়ে এবং মানসিক চাপে বাসায় বসে অফিস করার অসুস্থ পরিবেশ অনেককেই দুর্দশার দারে নিয়ে গেছে। দুঃখজনক ভাবে এটিই অপেক্ষাকৃত কম ঝাঁজাল ঘটনা। স্বল্পবয়ষ্ক তরুণীরা যারা যৌথ পরিবারে বাস করে, তারা তাদের মামা চাচা অথবা অন্য কোনো আত্মীয়ের দ্বারা যৌন নিপীড়ণের ঘটনা আমাদের বলেছে এবং তারা জানিয়েছে এই বিষয়ে অন্য কারো সাথে কথা বলার ব্যাপারে তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। কারণ তাদের ধারণা অন্য কেউ এই ঘটনা বিশ্বাস করবে না। শুধু তাই না, একটি মেয়ে তাদের এটাও জানিয়েছে যে তার এক আত্মীয়ের দ্বারা জোরপূর্বক যৌনাঙ্গে স্পর্শের ঘটনা তার মাকে জানানোর পর তাকে তার মা এই ব্যাপারে নীরব থাকতে বলেছে। তাদের কাছে, সাত বছরের একটি শিশু কে তার কর্মহীন বাবার নিষ্ঠুর অত্যাচার থেকে বাঁচানোর জন্য এক অসহায় মা আবেদন করেছেন। কিছু নারী তাদের স্বামী এবং শশুড়বাড়ির লোকদের দ্বারা মৌখিক এবং শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সব থেকে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো কিছু মানুষ এই ভয়াবহ আর্থিক অবস্থায় তাদের বৃদ্ধ মায়েদের সাথে ঘটে যাওয়া নিপীড়ণের ঘটনা উল্লেখ করেছেন। শিক্ষত স্বামীরা কি কারণে তাদের স্ত্রীদের উপর শারীরিক নির্যাতন করছে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পারছে না। এধরণের আরো লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা তাদের ব্যথিত করেছে। এই সব প্রেরিত বার্তা আমাদের সহযোগিতার দুয়ার খুলতে চারিত করেছে। হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে সুস্থ ভাবে বাঁচার তাগিদে, তারা এই নিপীড়িত নারীদের ঘটনা শুনতে এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে সার্বিক ভাবে প্রস্তুত। তাদের লক্ষ্য হলো বিভিন্ন কৌশলে কিভাবে তারা তাদের অবস্থার উন্নতি করতে পারে তা নিয়ে তাদের পরামর্শ দেয়া এবং বিভিন্ন ন্যাশনাল হেল্পলাইন সম্পর্কে তাদের অবগত করা। তাছাড়া যদি তাদের আইনী ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন মনে হয়, তারা আইনজীবীদের দ্বারা তাদের বিনামূল্যে পরামর্শ দেয়ার ব্যবস্থা করছেন। তারা নারীদের স্বাগত জানাচ্ছেন তাদের বিষয়ে কথা বলার জন্য। একইভাবে যদি অন্যান্য নারী এবং পুরুষেরা তাদের পরিবার, নিকটাত্মীয় অথবা বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঘটে যাওয়া পারিবারিক নির্যাতনের অবস্থা আমাদের কাছে তুলে ধরে, তাহলে তা নিপীড়িত নারীদের ব্যাধিগ্রস্থ অবস্থা পরিবর্তনে সহায়তা করবে।