নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিএনপির দলীয় দুটি শোকজের চিঠিকে পুঁজি করে খুবই হালকা রাজনৈতিক খেলায় মেতেছে উত্তরা বিএনপির দুটি পক্ষ। ঈদ ও ত্রাণ নিয়ে নেতাদের এসব আয়োজন দেখে মনে হয়েছে সব অনুষ্ঠানই শোয়ের পাল্টা শো। এসব শোর বাইরে বড় রকমের ত্রাণ বিতরণের চিত্রও দেখা গেছে উত্তরাতে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ ভিন্ন মাত্রার ঘরোয়া শো দিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। উত্তরার স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল বিএনপির পক্ষ থেকে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের খবরা-খবর জানাতে ‘শোকজ’ ধরনের একটি চিঠি দেওয়া হয় যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীরকে। এই চিঠি পাওয়ার পর একদল কর্মী বাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এস এম জাহাঙ্গীরকে ঢাকা-১৮ আসন বিএনপির অভিভাবক দাবি করে নানা প্রচারণা চালাতে থাকে। কিন্তু এ প্রচারণায় রাস টেনে ধরেন বিএনপি নেতা এম কফিল উদ্দিন। পরদিনই একই রকম একটি চিঠি দেওয়া হয় তাকে। দ্বিতীয় এ চিঠির ঘটনায় জাহাঙ্গীর শিবির অনেকটা হতাশও হয়।
করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর সময় থেকে চিঠি পাওয়া নেতাদের কাউকে মাঠে দেখা না গেলেও তৃণমূলের একটি বড় অংশ মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকেই ত্রাণ নিয়ে বিভিন্ন থানায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা গেছে। যা এককভাবে দুই নেতার ত্রাণসামগ্রী থেকে কোনো অংশে কম নয়।
এ দিকে চিঠি পাওয়ার পরই উত্তরার সাতটি থানায় বেশ কয়েক দিন ত্রাণ বিতরণ করেন এস এম জাহাঙ্গীর। এসব বিতরণে প্রতিটি থানায় ২ শতাধিক প্যাকেট বিলি করা হয় কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে। তবে প্রতিটি ত্রাণ অনুষ্ঠানে ৫ শতাধিক প্যাকেট বিলির কথা বলছেন জাহাঙ্গীর শিবির। তবে প্রচারণার বাইরে থাকা অংশটি সম্মিলিতভাবে বৃহত্তর উত্তরা এলাকার সব কয়টি ওয়ার্ডে প্রায় চার হাজারের মতো খাদ্যের প্যাক বিলি করেছেন। যা এখনো চলমান রয়েছে।
তবে দ্বিতীয় চিঠি পাওয়ার পর জাহাঙ্গীর থেকেও বেশি ত্রাণসামগ্রী দিয়েছেন বলে দাবি করেন এম কফিল উদ্দিন ও তার পরিবার। পরিবারের একজন জানান, যেসব নেতার ছবির দরকার, প্রচার দরকার, তারা ছবি দিয়েছেন, প্রচার দিয়েছেন। কিন্তু আমরা না খেয়ে থাকা মানুষের পাশে থাকার চেষ্ঠা করছি। এখন পর্যন্ত ২৫০০ ফুড প্যাক ও কাপড় বিলি করা হয়েছে। ত্রাণের বিষয়ে জাহাঙ্গীরের বক্তব্য জানতে চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে তৃণমূল নেতাদের অনেকে বলছেন, প্রায় চার হাজার ফুড প্যাক নিয়ে যেসব নেতারা তৃণমূলে কাজ করেছেন তারা কোনো চিঠি বা অভিভাবকের অপেক্ষা করেননি। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে সমস্যা যেখানে দেখেছেন সাধ্যমতো পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন।
এ দিকে উত্তরা বিএনপির অভিভাবক সাজতে অনেকেই অনেকভাবে নিজেকে জাহির করছেন। দলীয় শোকজ চিঠির আগে এ নেতাদের দেখা না গেলেও চিঠি পাওয়ার পর সিনিয়র নেতাদের নিয়ে শোডাউন করে ত্রাণ বিলিকে অনেকে জাহাঙ্গীরের জন্য ভালো খবর হিসেবে বিবেচনা করছেন। তবে বাস্ততে তা নয় বলে জানিয়েছেন অন্য একটি পক্ষ। তাদের মতে, যুবনেতার এসব শো আসলেই ‘শো’। বরাবরই উনি শোয়ের রাজনীতি করেন। করোনার শুরুতে উনার দেখা নাই, যেই চিঠি পাইছেন তখনই সরব হয়েছেন। এটা এক ধরনের প্রচারের রাজনীতি।
তাদের মতে, ঢাকায় এমপি হতে গেলে এমন রাজনীতি যে হীতে বিপরীত হয় তা অতীতেও দেখা গেছে। প্রমাণ হিসেবে তারা বলছেন, গত নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসন ফাঁকা গেলেও জাহাঙ্গীর নিজের জন্য মনোনয়ন নিতে ব্যর্থ হন। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। বাস্তবে শোয়ের রাজনীতি না করে যারা ‘ফাওয়ার পলিটিকস’ করেন, তারা জেএসডির স্বপনকে উত্তরা থেকে মনোনয়ন পাইয়ে দেন। তেমন ‘পাওয়ার গ্রুপে’র পক্ষ থেকে উত্তরায় এবার মনোনয়ন চান বিএনপি নেতা এম কফিল উদ্দিনসহ আরো অন্তত তিনজন নেতা। যাদের শক্তিমত্তা বা বলয় কোনো অংশেই জাহাঙ্গীর থেকে কম নয়। তবে শোয়ের রাজনীতিতে উত্তরা তথা নগর উত্তরে জাহাঙ্গীর আপাতত সেরা। এমনই মত উত্তরা বিএনপির অনেকের।