ক্রীড়া প্রতিবেদক : তারিখটা ১৮ জুন, ২০০৫। শুধু বিশ্বসেরা নয়, অস্ট্রেলিয়া তখন ক্রিকেটকে বানিয়ে ফেলেছে ইচ্ছাপূরণের খেলায়। যাকে তাকে হারিয়ে দেয়। বলে কয়ে যেকোনো শিরোপা জিতে যায়। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দলের রেকর্ডও ওই দলটির নামের পাশে।
এরকম একটা সময়ে আকাশ থেকে তাদের মাটিতে নামিয়ে আনল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মতো ‘পুচকে’ দল হারিয়ে দেয় বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। ২০০৫ সালে কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর কথা কি মনে আছে? সবাই হয়ত নড়েচড়ে বসছেন। সেই জয়ের আজ ১৫ বছর পূর্ণ হলো। আজ সেই ১৮ জুন। সেই জয়টি ছিল বাংলাদেশের দশম ওয়ানডে জয়।
ধ্রুবতারা হয়ে বাংলাদেশে ক্রিকেটে আসা আশরাফুল অস্ট্রেলিয়াকে এক হাতে শাসন করে দিয়েছিলেন জয়ের স্বাদ। রূপকথার মতো বলতে শোনাবে, বিশ্ব ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছিলেন আশরাফুল। তার অনবদ্য সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ২৫০ রানের লক্ষ্য বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে ৫ উইকেট হাতে রেখে। ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠে বাংলদেশের এই জয়। উইজডেন সাময়িকীর সম্পাদকীয়তে এই জয় নিয়ে লেখা হল।
ন্যাটওয়েস্ট সিরিজের দ্বিতীয় সেই ম্যাচের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়াকে ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। আর ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে সাজঘরে ফেরত পাঠান মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশের বোলারদের বোলিং তোপে এক পর্যায়ে ৫৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত ড্যামিয়েন মার্টিন ও মাইকেল ক্লার্কের ফিফটিতে ৫ উইকেটে ২৪৯ রান তুলেছিল অস্ট্রেলিয়া।
২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালো ছিল না। ৭২ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে টাইগাররা। তবে এর পরই দলের ত্রাণকর্তা হয়ে দেখা দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। অধিনায়ক হাবিবুল বাশারকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে ১৩০ রান যোগ করেন তিনি। বাশার ব্যক্তিগত ৪৭ রানে ফিরলেও দারুণ এক সেঞ্চুরি করে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়ে বিদায় নেন আশরাফুল।
শেষ ওভারে বাংলাদেশের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৭ রান। ক্রিজে ছিলেন আফতাব আহমেদ ও মোহাম্মদ রফিক। স্ট্রাইকে ছিলেন আফতাব। শেষ ওভারে জ্যাসন গিলেস্পির করা প্রথম বলেই মিড-উইকেটের ওপর দিয়ে বল সীমানা ছাড়া করেন আফতাব, ছক্কা। আর পরের বলে ১ রান নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ।
এক দশক পর আজকের দিনেই ঘটেছিল আরেক অভাবনীয় ঘটনা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে আছে আরো একটি কারণে। ২০১৫ সালে আজকের দিনেই ওয়ানডে ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয়েছিল মুস্তাফিজুর রহমানের। কি চোখের সামনে রোহিত, বিরাটদের পরাজয়ের স্মৃতি ভেসে আসছে? মিরপুরে সেদিন মুস্তাফিজুর রহমানের অভিষেক হয়েছিল। পাঁচ উইকেট নিয়ে এলোমেলো করে দেন ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপ। শক্তিশালী দল নিয়ে এসেও সেবার বাংলাদেশে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারে ভারত।
মুস্তাফিজ তখন ছিল অচেনা। ১৯ বছর বয়সি তরুণকে নিয়ে তেমন আগ্রহ ছিল কারোরই। কিন্তু তার কাটারে যখন ভারতের ব্যাটিং লাইনআপের দড়ি ‘কেটে গেল’ তখন তিনি হয়ে গেলেন ধ্রুবতারা। বিশ্ব ক্রিকেট চিনল ‘কাটার মাস্টার’-কে। ৭৯ রানের জয়ের নায়ক ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৮ জুন আরও একটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। সেটা এশিয়া কাপের মঞ্চে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল বিশাল ব্যবধানে। ওইটুকু স্মৃতি বাদ দিলে ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৮ জুন সব সময়ই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আর্শীবাদ হয়ে এসেছে। ব্যাট-বলের লড়াইয়ে দারুণ স্মৃতি জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে।