রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

করোনায় বদলে যাচ্ছে মানুষের পেশা

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০
  • ২২১ বার পঠিত

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মিলন হোসেন (ছদ্দনাম) এখন পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি করছেন ভ্যান গাড়িতে। স্টেশনারি ব্যবসায়ী মাকসুদ আলম ফুটপাতে বিক্রি করছেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী। ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী এলান উদ্দিন এখন হোটেলে মসলা সরবরাহের ব্যবসা করছেন। করোনা এভাবে পাল্টে দিচ্ছে অনেক মানুষের পেশা।

সারা বিশ্বের মতো করোনা প্রভাব ফেলেছে দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার উপরও। বন্ধ হয়ে গেছে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। চালু থাকা অনেক প্রতিষ্ঠান টিকে থাকার লড়াইয়ে অর্ধেক করেছে কর্মীদের বেতন। কিন্তু থেমে নেই মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের।

রাজধানীর মাটিকাটায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক মিলন হোসেন। করোনা সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় তার স্কুলটিও। সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় তার বেতনও। সংসারের চাকা সচল রাখতে ভ্যান গাড়িতে করে এখন তিনি পেঁয়াজ-রসুন বিক্রি করছেন।

ফটোকপিসহ অফিস স্টেশনারির ব্যবসায়ী মাকসুদ আলম এখন ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি করছেন। দোকানের অবস্থানের কথা উল্লেখ না করে মাকসুদ জানান, তার দোকান যেখানে ছিল সেখানে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কোচিং সেন্টার ছিল। দু’জন কর্মচারীও ছিল তার। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দুই মাস জমানো টাকা দিয়ে কর্মচারীদের বেতন আর সংসার খরচ চালিয়েছেন। কিন্তু এরপর আর পারেননি। সংসার চালাতে দোকান ছেড়ে দিয়ে এখন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবসা করছেন।

এক সময় সম্মানের সঙ্গে সমাজে টিকে থাকা মানুষগুলো নিজেদের সামজিক অবস্থান ধরে রাখতে যুদ্ধ করছেন। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই সব কাজ করতে পারছে না। অনেকে আবার লোকলজ্জা ঝেড়ে ফেলে মেনে নিয়েছেন কঠিন বাস্তবতাকে। তাইতো বাধ্য হচ্ছেন পেশা বদল করতে। এক সময় যে পেশা তাকে সমাজে মর্যাদার আসন দিয়েছিল সেই পেশা থেকে বিচ্যুত হয়ে এখন তিনি দিশেহারা।

তেমনি একজন সোহরাব হোসেন। কাজ করতেন রাজধানীর নীলক্ষেতের একটি প্রেসে। মাসিক বেতন ছিল সাড়ে ১০ হাজার টাকা। সাথে ওভারটাইম। করোনার কারণে প্রেস মালিক গত মাসে লোক ছাটাই করেন। অবিবাহিত সোহরাবকে গ্রামে তার  বাবা-মা আর দুই ভাই-বোনদের ভরন-পোষণ করতে হয়। প্রেসের চাকা থেমে গেলেও জীবনের চাকা সচল রাখতে কিনে নেন একটি ফ্ল্যাস্ক। সাথে কিছু কাপ আর  কয়েক প্যাকেট সিগারেট।

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি করেন দুই ফ্লাস্ক চা। জানালেন হেটে হেটে চা বিক্রি করতে খুব কষ্ট হয়। আর লোকলজ্জার ভয়ে অপরিচিত এলকায় গিয়ে চা বিক্রি করেন। তারপরও হঠাৎ পরিচিত কারো মুখোমুখী হলে লজ্জায় পড়তে হয়। তারপরও ডাল-ভাত খেয়ে কম হলেও কিছু টাকা পাঠাতে পারেন গ্রামে পরিবারের কাছে।

এলান উদ্দিন দীর্ঘদিন টিভি-ফ্রিজসহ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। করোনায় গত কয়েকমাস ধরে সব কিছু বন্ধ থাকায় ধস নেমেছে তার ব্যবসায়। একদিকে ব্যাংক লোন পরিশোধের টেনশন, অন্যদিকে কিস্তিতে পণ্য বিক্রি করায় সেসব টাকাও উঠাতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে কোন রকমে কিছুটা লোন পরিশোধ করেন। বাকি টাকা দিয়ে বাসাতেই পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু  সংরক্ষণ করে রেস্টুরেন্টে তা সরবরাহ করার কাজ শুরু করেছেন।

এভাবে করোনা দীর্ঘদিনের পেশা বদলে ফেলতে বাধ্য করছে দেশের সাধারণ মানুষের।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com