নিউজ ডেস্ক: জন্মাষ্টমী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে এ উৎসব পালিত হয়। প্রচলিত বিশ্বাস মতে, দ্বাপর যুগের কোনোও এক শ্রাবণ (মতান্তরে ভাদ্র) মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন। হিন্দু সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবেন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে অশুভ শক্তিকে দমন করে সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় ধরাধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব ঘটেছিল। তার আবির্ভাব বিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন যুগের সূচনা করে। নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষকে রক্ষায় তিনি পরিত্রাতার ভূমিকা পালন করেন, অন্ধকার সরিয়ে পৃথিবীকে আলোয় উদ্ভাসিত করেন।
আজ সরকারি ছুটি।জন্মাষ্টমী উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলে সম্প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে হিন্দু সম্প্রদায়কে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের মহান ঐতিহ্য। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই ঐতিহ্য অব্যাহত রেখে পারস্পরিক সৌহার্দ ও সম্প্রীতি অটুট রাখতে হবে। মানবকল্যাণ সব ধর্মের মূল বাণী। ’
তিনি বলেন, ‘শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন মানবতার প্রতীক ও সমাজ সংস্কারক। সমাজ থেকে অন্যায়-অত্যাচার, নিপীড়ন ও হানাহানি দূর করে মানুষে মানুষে অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে তোলাই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মূল ভাবনা।’
দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এদেশে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। আমাদের সংবিধানে সকল মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণে বর্তমানে বিশ্ব বিপর্যস্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তিনি এ প্রেক্ষাপটে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সবাইকে এবারের জন্মাষ্টমী উদযাপনের আহ্বান জানান।
জানা যায়, এবার জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান যথারীতি ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে পালিত হবে এবং জন্মাষ্টমী সংশ্লিষ্ট সকল অনুষ্ঠানমালা মন্দিরাঙ্গনে সীমাবদ্ধ থাকবে। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সকল প্রকার সমাবেশ, শোভাযাত্রা বা মিছিল করা থেকে বিরত থাকারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারন সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী জানান, জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপনে কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে একদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮ টায় দেশ, জাতি ও বিশ্ব মঙ্গল কামনায় শংকর মঠ ও মিশন, সীতাকু-’র সন্ন্যাসীদের পরিচালনায় শ্রীশ্রী গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হবে ও রাতে শ্রী শ্রী কৃষ্ণ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠে এ উপলক্ষে সকাল ৯ টা থেকে ১১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত গীতা পাঠের আয়োজন করা হয়েছে। অন্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ভজন, দুপুরে মধ্যাহ্নে প্রসাদ বিতরন, রাত ৭ টা ৪০ মিনিটে গুরু মহারাজের বানীবর্চন ও রাত ৮ টায় শ্রীকৃষ্ণ পূজা। মন্দিরে আসন গ্রহন ও প্রসাদ গ্রহনের সময় ভক্তদের স্বাস্থ্যগত ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরিধান আবশ্যক বলে মঠের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।