নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) গঠন শুনানির জন্য আগামী ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী তারিখ ধার্য করে আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন সুলতান মাহমুদ সীমন। সঙ্গে ছিলেন রেজিয়া সুলতানা চমন ও সাবিনা ইয়াসমিন খান মুন্নি। অন্যদিকে ওয়াহিদুল হকের পক্ষে ছিলেন আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুর রহমান।
প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন জাগো নিউজকে জানান, হত্যা, গণহত্যা, ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আসামিপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আগামী ৩০ জুলাই পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন।
তিনি আরও জানান, ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউশনের শুনানি ২৮ মে শেষ করা হয়েছে। পরে আজ শুনানির নির্ধারিত দিনে আসামিপক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার সময় আবেদন করলে আদালত তা পিছিয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য ৩০ জুলাই দিন ধার্য করেন। আসামি ওয়াহিদুল হকের পক্ষে নতুন নিয়োগ পাওয়া আরেক আইনজীবী মিজানুর রহমান মামলার প্রস্তুতির জন্য সময় চেয়ে এ আবেদন করেন বলে জানা গেছে।
গত ৪ মার্চ এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের দায়ের করা অভিযোগ আমলে নিয়ে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য ২৫ মার্চ দিন ধার্য করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর থেকে অভিযোগ গঠন শুনানি শুরু করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় ২৮ মে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের শুনানি শেষ করে।
এর আগে গত বছরের ৩০ অক্টোবর আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন করে প্রসিকিউশন বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে প্রসিকিউশন পক্ষ তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে দাখিল করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর এ মামলার তদন্ত শুরু করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত সম্পন্ন হয়। এ মামলায় মোট ৫৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৮ মার্চ আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযুক্ত ক্যাপ্টেন ওয়াহিদুল হক রংপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৯ ক্যাভেলরি রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্টের দায়িত্বে থেকে ৪টি সামরিক জিপে মেশিনগান লাগিয়ে গুলিবর্ষণ করে রংপুর সেনানিবাস সংলগ্ন এলাকায় ৫০০ থেকে ৬০০ স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে হত্যা, গণহত্যা ও অসংখ্য মানুষকে গুরুতর আহত করেন। গুলিবর্ষণ করে সংলগ্ন এলাকার বাড়ি ঘরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। হত্যা, গণহত্যার শিকার মানুষের লাশ পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে কয়েকটি গর্তে মাটিচাপা দেয়া হয়।
গত বছরের ২৪ এপ্রিল সকালে আসামি ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে ওয়াহিদুল হককে গ্রেফতার করা হয়।
ওই বছরের ২৫ এপ্রিল তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে বিচারপতি আমির হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আসামি ওয়াহিদুল হককে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।