স্থানীয়ভাবে পারিবারিক কবরস্থান থাকলেও শুধু নিজের পরিবারের লোকদের জন্য বাড়ির সামনে ৭ শতক জমি কেনেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের আলতাফ হোসেন। সেই জমিতে প্রথম দাফন করা হলো তার দুই ছেলেকে।
শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৭টার দিকে জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট এলাকায় বাস-ট্রেনের সংঘর্ষে তারা নিহত হন। তারা হলেন- সরোয়ার হোসেন (৪০) ও আরিফুর রহমান রাব্বী (২০)।
দুই ছেলেকে হারিয়ে বিলাপ করতে করতে আলতাফ হোসেন বলেন, ‘কবরস্থানের জায়গার জন্য সেখানে তাদের দাফনের আগে আমাকে কেন দাফন হলো না?’
তিনি বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তির জন্য রাব্বীকে সঙ্গে নিয়ে গত বুধবার ঢাকায় যায় সরোয়ার। ভর্তি শেষে দুই ভাই রাতে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে বাড়ির উদ্দেশ্যে জয়পুরহাট স্টেশনে এসে নামবে বলে রাতে ফোনে জানিয়েছিল। আর কথা হয়নি। পরে সকালে প্রথমে বড় ছেলেকে ফোন দিলে সে ফোন ধরে না, পরে ছোট ছেলেকে ফোন দিলে একজন নারী ধরে। তিনি বলেন, মোবাইলের মালিক ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেছে। কিছুক্ষণ পর বড় ছেলেরও মৃত্যু সংবাদ পাই।’
নিহতদের চাচা আনোয়ার হোসেন জানান, পল্লীচিকিৎসক আলতাফ হোসেন ও আম্বিয়া বেগমের দুই ছেলে। এছাড়া তাদের আর কোনো সন্তান নেই। বড় ছেলে সরোয়ার পশুচিবিৎসক। তার স্ত্রী জিয়াসমিন গর্ভবতী। আর রাব্বী ছোটবেলা থেকেই মেধাবী। এ জন্য বাবার শখ ছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানানোর। এরই মধ্যে এইচএসসিতে অটোপাস হওয়ায় ঢাকায় গিয়েছিল ভর্তি হতে। এর আগে বেশ কিছুদিন আগে বাবা ও ছোট ছেলে মিলে ঢাকায় গিয়ে খোঁজ-খবরও নিয়ে এসেছিল।
আলতাফ হোসেনের বন্ধু পল্লীচিকিৎসক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আমার বন্ধুর দুই ছেলে খুবই ভদ্র ছিল। দুই ছেলেকে হারিয়ে বাবা আলতাফ ও মা আম্বিয়া খাতুন পাগলপ্রায়। শুধু ওরাই না সান্ত্বনা দিতে আসা গ্রামবাসীও নির্বাক।’
উল্লেখ্য, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা বাঁধন নামের একটি যাত্রীবাহী বাস (বগুড়া জ-১১-০০০৮) হিলি স্থলবন্দরের দিকে যাচ্ছিল। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট অতিক্রম করার সময় ওই বাসটিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে বাসে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১০ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। আহতদের বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। বগুড়া যাওয়ার পথে আরও দুজনের মৃত্যু হয়।