নোয়খালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জার গাড়িবহরে হামলা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সেলিম নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা আহত হওয়ার দাবি করেছেন আবদুল কাদের মির্জা।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ভোর সাড়ে ৬টার দিকে শপথ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে দাগনভূঞা জিরো পয়েন্টে দুর্বৃত্তরা তার গাড়িবহরে হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন আবদুল কাদের মির্জা। তিনি বলেন, শপথ নেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ভোরে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে দাগনভূঞার জিরো পয়েন্টে এক দল দুর্বৃত্ত আমার গাড়িতে হামলা করে। সামনে একটি ট্রাক থাকায় আমার গাড়িটি পার হয়ে আসলেও পেছনের গাড়িতে দুর্বৃত্তরা ইটপাটকেল লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে এবং ডিম ছোড়ে।
দাগনভূঞা সার্কেলের এএসপি সাইকুল আহমেদ বলেন, মির্জা কাদের দাগনভূঞা এলাকায় ঢুকলে কে বা কারা তার গাড়িতে ঢিল ছুড়ে। এ রকম একটি সংবাদ পেয়েছি। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী জানান, আমি অসুস্থ থাকায় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থান করছি এবং মির্জা কাদেরের সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই সঙ্গে ঘটনায় জাড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
আর দাগনভূঞা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল কবির রতন জানান, আমি ঢাকায় রয়েছি, গণমাধ্যমে এ ঘটনার কথা শুনেছি। বিষয়টি কাদের মির্জার বানোনো হতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সে নিজেই বিভিন্ন সময় মানুষকে ফাঁসানোর জন্য ঘটনার জন্ম দিতে পারে।
এদিকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কাদের মির্জা চট্টগ্রামে পৌঁছান। সেখানে তার ফেসবুক পেজে লাইভে এসে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী আপনারা আমার সালাম ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে কথা বলার জন্য হাজির হয়েছি। আজকে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার অফিসে আমার শপথ। সে শপথ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আসার পথে ফেনীর দাগনভূঞাতে আমার গাড়িবহরে হামলা করেছে। যারা ফেনীতে একরামকে হত্যা করেছে, ঠিক একই কায়দায় একরাম চৌধুরী ও নিজাম হাজারী সন্ত্রাসীরা আমাকে হত্যা করার জন্য গাড়ির প্রতিরোধ করে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে একটি ট্রাক থাকার কারণে আমার গাড়িটি নিয়ে দ্রুত আসার সুযোগ হয়েছে। যার জন্য আমার গাড়িতে কিছুই করতে পারে নাই। আমার পরবর্তী আরো ১০-১২টি গাড়ি ছিল সেগুলোর ওপর হামলা করেছে। ইটপাটকেল মারা হয়েছে, ডিম মারা হয়েছে। সেলিম নামে আওয়ামী লীগের এক নেতা আহত হয়েছেন।
কাদের মির্জা বলেন, এর আগে প্রকাশ্যে একরাম ভাইকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তার গাড়িসহ জ্বালিয়ে হত্যা করেছে। ২০১৮ সালে ফখরুল ইসলাম নামের একটি ছেলেকে দিদার বাহিনীর সদস্য সাইফুল ইসলাম হত্যা করেছে। ফেনীতে যে হত্যার রাজনীতি চলছে সেটা নিয়ে আমি আগেও বলেছিলাম বন্ধ করার জন্য। আজকে কেন বন্ধ করা হচ্ছে না? কাদের ইঙ্গিতে? আজকে নিজাম হাজারী ও একরাম চৌধুরী এত দাপট কীভাবে দেখায়। কীভাবে এত দাপট দেখিয়ে চলে? হামলা করার মতো আজকের ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ দেশে কি সরকার নেই? এ দেশে কি প্রশাসন নেই? এটার কি বিচার হবে না? ফেনীতে একরামকে হত্যা করেছে। দাগনভূঞাতে ফখরুল হত্যাকারীরা এখন প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করে।’
তিনি আরো বলেন, আমি অনতিবিলম্বে এদেরকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। কোনো অবস্থাতে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আমি ছেড়ে দিতে পারি না। আমি কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত করব না। আমি সাহস করে সত্য কথা বলব। অন্যায়-অবিচার জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। গরিবের পক্ষে আছি, থাকব। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান থাকবে। এ ঘটনাগুলো সঙ্গে যারাই জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা নিন।
আমার গাড়িতে হামলা, একরামকে হত্যা করা হয়েছে। বিচার হয়নি। ফখরুল ইসলামকে দাগনভূঞাতে হত্যা করেছে বিচার হয়নি। এভাবে কী হত্যার রাজনীতি চলবে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টা দেখবেন। আমি রাত ৮টায় লাইভে আসব, পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব বলেও ফেসবুক লাইভে তিনি জানান।