শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১১:৪৭ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

হুইপপুত্র শারুন ও ভাই নবাবের কমিশন বাণিজ্যে ওপেন সিক্রেট

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৬৫ বার পঠিত

জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল হক চৌধুরী ওরফে শারুন চৌধুরী, হুইপের ছোট ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের কমিশন বাণিজ্যে অতিষ্ঠ দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া এলাকার উন্নয়ন প্রজেক্ট-সংশ্লিষ্টরা। সরকারি-বেসরকারি এমন কোনো প্রজেক্ট নেই যেখানে তাদের কমিশন-দৌরাত্ম্য নেই। আওয়ামী লীগের কয়েকজন হাইকমান্ডের সঙ্গে সখ্য থাকা ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে তারা কমিশন বাণিজ্যে ওপেন সিক্রেট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পটিয়া বাইপাস সড়ক, ধলঘাট বোয়ালখালী সড়ক, হাইদগাঁও সড়ক, পাচুরিয়া সড়ক, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পটিয়া সরকারি কলেজ ভবন, পটিয়া উপজেলা অডিটোরিয়ামসহ যত ধরনের বড় বড় সরকারি প্রকল্প উপজেলাতে বরাদ্দ হয়ে থাকে তা শারুনের পছন্দের ঠিকাদারকে পাইয়ে দিতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে শারুন। বর্তমানে পটিয়া-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর ইন্দ্রপুল ব্রিজে সাপ্লাইয়ারের দায়িত্বে আছেন হুইপপুত্র শারুন। শারুনের কমিশন বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে ঠিকাদার ইতিমধ্যে দুইবার কাজ ফেলে চলেও গিয়েছিলেন। এ ব্রিজের নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের ফলে নির্মিত একটি গার্ডারে ফাটল দেখা দিলে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর জাইকার প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নতুন আরেকটি গার্ডার নির্মাণের নির্দেশ দেয়।

শারুনের বালুমহাল বাণিজ্য: পটিয়ায় বালুমহাল বাণিজ্যে হুইপপুত্র শারুন ইতিমধ্যে নতুন করে শুরু করেছেন। সেখান থেকে উপজেলার সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকান্ডে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বেশি দামে বালু কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এ বালুবাণিজ্য পটিয়ায় দেখভাল করেন যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন, খোরশেদ, সবুজ বড়ুয়া, লিটন বড়ুয়া, সবুজ মেম্বার, তানভির সাঈদ। বালুমহালটি উপজেলার ভেল্লাপাড়া এলাকায়।

হুইপের ছোট ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের মাটি লুটের বাণিজ্য : চট্টগ্রাম-১২ সংসদীয় আসনের এমপি নির্বাচিত হওয়ায় হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ছেলে শারুন, ছোট ভাই নবাব, মহব্বত, ভাগিনা লোকমান, সায়েম ও ছোট বোন রেখাসহ তার নিকট আত্মীয়স্বজনরা পটিয়ায় বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত। হুইপের ছোট ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব ও তার সহযোগী জিরির আবদুল্লাহ আল হারুনের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে যৌথ সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের সাইনবোর্ডে উপজেলার কেলিশহর, হাইদগাঁও, ধলঘাট, শোভনদন্ডি, ছনহরা, জঙ্গলখাইন, আশিয়া, ভাটিখাইন, খরনা, কচুয়াই, কোলাগাঁও এলাকার ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক থেকে দৈনিক ৩ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছেন নবাব। আর এসব এলাকায় প্রশাসন অভিযানে গেলেও লোক দেখানো জরিমানা করে। এখানে নবাবের ভয়ে মাটি লুটের বাণিজ্যে কেউ মুখ খুলেন না।

পটিয়ার শ্রীমাই খালের বালুবাণিজ্য: পটিয়ার শ্রীমাই খালের অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে শ্রীমাই খালের ওপর নির্মিত চট্টগ্রাম-পটিয়া-দোহাজারী রেল সড়কটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। শ্রীমাই খালের অবৈধ বালুবাণিজ্যে হুইপের ছোট ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাবের নেতৃত্বে তদারকি করেন জঙ্গলখাইন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ তানভীর, মহিউদ্দিন, আরাফাত শাখিল, কোরবান আলী, সবুজ মেম্বার, খোরশেদ, ছোট লিটন।

 

হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিমদের জায়গা দখলে ভাগিনা লোকমান খান ও ছোট বোন রেখা : পটিয়া উপজেলার অসহায় হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম পরিবারের জায়গা জবর দখলে লিপ্ত হুইপের আরেক ভাগিনা লোকমান খান। সে এসব অসহায় পরিবারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে জায়গা দখল ও নামমাত্র অর্থে জায়গা নামে-বেনামে দখল করার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া হুইপের ছোট বোন রেখা পটিয়া থানায় মামলার তদবির, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের পরিবহনের গাড়ি সাপ্লাইসহ নানা কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন।

ভাই নবাবে ম্লান হুইপের সুনাম: চট্টগ্রাম নগরের সঙ্গে দক্ষিণের উপজেলা পটিয়া। এমপি হওয়ার পর পটিয়াসহ নগরীতে এখন রাজত্ব চলছে শামসুল হক চৌধুরীর। এক সময় ক্রীড়াঙ্গনে দাপট দেখালেও এখন তিনি রাজনীতিতেও পোক্ত। পরপর তিনবার পটিয়ার এমপি হয়েছেন তিনি। আগামী নির্বাচনেও শামসুল হক চৌধুরী হতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। কারণ, চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই নেই আওয়ামী লীগে। আবার মাঠে কোণঠাসা বিএনপি। রাজনীতির মাঠ পরিষ্কার থাকলেও আগামী নির্বাচনে জনতার মঞ্চে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে এমপি শামসুল হককে তার ছোট ভাই মুজিবুল হকের কারণে। এমপির অর্জন ম্লান করছেন তারই ছোট ভাই মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব। এমপির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পে খবরদারি করেন নবাব। মতের মিল না হলে করেন মারামারিও। অভিযোগ আছে নীল রঙের একটি প্রাইভেটকারে এমপি ‘স্টিকার’ ব্যবহার করেই চলাফেরা করেন নবাব।

এদিকে এমপির বিরোধীরা মনে করছেন নবাবের এমন খবরদারিই আগামী নির্বাচনে কাল হতে পারে হুইপের জন্য। তবে হুইপ শামসুল মনে করছেন, তার ভাইকে ঘিরে যা হচ্ছে তা বিরোধী পক্ষের অপপ্রচার। এলাকায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করায় আগামী নির্বাচনেও তার ওপর আস্থা রাখবে দল।

 

কুসুমপুরা ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কুসুমপুরা-কান্তিরহাট সড়ক দিয়েই কোলাগাঁও ইউনিয়নের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর গাড়ি যাতায়াত করে। কিন্তু বেশ কিছু দিন ধরে এসব গাড়ি থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। যদিও পুলিশ এলে তারা আর থাকে না।

জানা গেছে, কোলাগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক নেতা আবদুর রউফ ভুট্টোকে শ্রমিক লীগে যোগদান করিয়েই নেপথ্যে চালানো হচ্ছে এসব অপকর্ম। ভুট্টোর বিরুদ্ধে হত্যা ও অস্ত্র মামলাসহ ১৮টি মামলা রয়েছে। সম্প্রতি মোহাম্মদ নগর এলাকার আমেরিকা প্রবাসী বেলাল হত্যাকা-ে বেশ কয়েক মাস কারাবাস করেন ভুট্টো।

এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবত এমপির ভাই নবাব কোলাগাঁও এলাকায় অবস্থান করে প্রভাব বিস্তার করছেন। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা এখানে অসহায়। এখানে এমপির ভাইয়ের কথাতেই চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। নীল রঙের একটি প্রাইভেটকারে এমপি ‘স্টিকার’ ব্যবহার করেই এলাকায় যাতায়াত করেন এমপির ভাই নবাব। তার গাড়িতে এমন স্টিকার থাকায় বিব্রত প্রশাসনও।’

স্থানীয়রা জানান, পটিয়া ইন্দ্রপুল থেকে কমলমুন্সির হাট পটিয়ার ৫ কিলোমিটার বাইপাস সড়কে চলা ৭০ কোটি টাকার কাজও বেনামে নিয়ন্ত্রণ করছে নবাব। নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ইট, পাথর, বালুসহ সব নির্মাণসামগ্রী নিতে হয় তার লোকজন থেকেই। ভেল্লাপাড়া ব্রিজের পূর্ব পাশে বালুমহালটিও নিয়ন্ত্রণ করছে নবাব সিন্ডিকেট। উক্ত বালুমহালটি বোয়ালখালী উপজেলার এক ব্যবসায়ী ইজারা নিলেও নবাব ভয় দেখিয়ে তার থেকে এটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

অভিযোগ অস্বীকার করে মুজিবুল হক চৌধুরী নবাব বলেন, ‘ভাইয়ের ইমেজ ক্ষুণ্ণ হবে বলে ২২ লাখ টাকা ক্ষতি হলেও আমি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে সরে এসেছি। আমি স্বতন্ত্রভাবে ব্যবসা করি। এমপির নাম ব্যবহার করে কোথাও কোনো অন্যায় করিনি। শিল্পপ্রতিষ্ঠান ফোর এইচ গ্রুপ কিংবা রিজেন্ট টেক্সটাইলে আমি কোনো ব্যবসা করি না। এখানে হারুন, জাফর, মাহবুব, বুলবুল, রফিক হাজি, ওসমান হাজি, বজল হক, ইকবাল বাহার, আবদুর রউফ ভুট্টো, ছোট লিটন, বক্কর মেম্বারসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগের অনেক নেতা ব্যবসা করে। তারা কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখানে পাথর, বালি কিংবা ইট সাপ্লাই দেয়। কেউ কেউ কারখানার জুট অংশ অন্যত্র সরবরাহের কাজ করে। বাইপাস সড়কে যাতে যথাযথভাবে কাজ চলে সেজন্য আমি অন্যদের কাজ বণ্টন করে দিয়েছি। আওয়ামী লীগের একটি অংশই অপপ্রচার চালাতে আমার নামে নানা অভিযোগ আনছে।’ সূত্র: দেশ রূপান্তর

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com