শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

হুইপপুত্রসহ সব দোষীর বিচার দাবি ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রীর

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১
  • ১৮৩ বার পঠিত

চট্টগ্রামের ব্যাংকার ও তরুণ ব্যবসায়ী মোর্শেদ চৌধুরীকে হুমকি প্রদান ও মানসিক চাপ প্রয়োগে আত্মহত্যায় বাধ্য করার দায়ে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীসহ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য থাকা সকল অভিযুক্তকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে।

শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিহত ব্যাংকারের স্ত্রী শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরী এমন দাবি জানিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু অভিযোগ তুলে ধরেছেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সাথে মোর্শেদ চৌধুরীর মা নুর নাহার ও কন্যা মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুমও উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আকুল আবেদন জানিয়ে ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলতে চাই, স্বজন হারানোর গভীর মর্মবেদনা আপনি ছাড়া আর কে ভালোভাবে বুঝবে? জীবনের সর্বস্ব হারিয়েও আপনি ভেঙে পড়েননি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছেন। দেশ সেবার দায়িত্ব পেয়ে ইতিহাসের নির্মম খুনীদের বিচার করে জাতিকে দায়মুক্ত করেছেন। আমার নিষ্পাপ মেয়েটিও আপনার মাধ্যমে তার বাবার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের উপযুক্ত বিচার পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

তাঁর স্বামীকে লোনের কথা বলে শারুন, সাকিব, জাভেদ-পারভেজ গং যে ২৫ কোটি টাকা দেয় সেই টাকার উৎসও খুঁজে বের করা দরকার বলে জানিয়েছেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, শারুনের পার্টনার পারভেজ সাকিব গং আমার স্বামীকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়। তার বিপরীতে মোর্শেদ তাদের প্রায় ৩৮ কোটি টাকা পরিশোধ করে। তা সত্ত্বেও হুইপ পুত্রের সেই সহযোগিরা অলিখিত চেক ও স্টাম্পের ভয় দেখিয়ে আরো টাকা দিতে চাপ দেয়। নানাভাবে হুমকি দেয়। ফ্ল্যাটে হামলা চালায়। পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। জীবনযাত্রা সংকুচিত করে ফেলে। অতিষ্ঠ হয়ে মোর্শেদ দেশ ত্যাগ করতে চাইলেও তাদের কারণে সফল হননি। ফলে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী কারা? ” এমন প্রশ্নে ব্যাংকার মোর্শেদের স্ত্রী বলেন, সুইসাইড নোট অনুযায়ী আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী হিসেবে মামলায় অভিযুক্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল, তার ভাই পারভেজ ইকবাল ও নাইম উদ্দিন সাকিব। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী ও আরসাদুল আলম বাচ্চু গং-দের নামও উঠে আসে।

শারুনের সঙ্গে এই লেনদেন নিয়ে মোর্শেদের কথা হয়। ব্যবসায়ী আজম খানের উপস্থিতিতেও শারুন, সাকিব, পারভেজ, জাভেদ গংয়ের বৈঠক হয়। বাসায় মোর্শেদকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

‘শারুন কীভাবে কী কী চাপ দিয়েছে?’ এই প্রশ্নের জবাবে ইশরাত জানান বলেন, শারুণ ফোন করে চট্টগ্রামের রেডিসন হোটেলে দেখা করতে বলে। শারুন সরাসরি বিনিয়োগ না করেও কেন সাকিব-পারভেজের হয়ে হস্তক্ষেপ করছেন, চাপ প্রয়োগ করছেন, তা জানতে চেয়েছিল আমার স্বামী মোর্শেদ। মোর্শেদ জানতে চেয়েছিল, ‘আপনার সাথে তো কোন লেনদেন নেই। আপনি কেন মাঝখানে কথা বলছেন?’
পাল্টা উত্তরে হুইপপুত্র বলেন, ‘লেনদেন আছে কি নেই, তা নিয়েও এখন কথা হবে। আগে আসেন। মিট করেন।’
রেডিসনে যাওয়ার হুমকির রাতে ২৯ মে ২০১৯ তাদের ফ্ল্যাটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এ উভয় ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র থাকতে পারে।’
‘ওই রাতে ব্যবসায়ী আজম খানের বাসায় মোর্শেদকে ডেকে নেওয়া হয়, সেখানে শারুনও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান ইশরাত।
তিনি বলেন, শারুনের সহযোগী ছিল শহীদুল হক চৌধুরি, রাসেল, চিটাগাং চেম্বারের সাবেক দুই পরিচালক জাবেদ ইকবাল ও তার ভাই পারভেজ ইকবাল এবং নাঈম উদ্দিন সাকিব। আত্মীয় হিসেবে এমপি দিদারুল আলম মধ্যস্থতা করতে চেয়েছেন। শারুন ও পারভেজ না আসায় তা সম্ভব হয়নি। হুইপপুত্র শারুন ও তার বন্ধুরা মোর্শেদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এই চাপ আত্মহত্যা প্ররোচনার মধ্যে পড়ে।

২০১৮ সালের মে মাসে সাকিবের বাবা এনসিসি ব্যংক চেয়ারম্যান এম আবু মহসিন তাদের পাঁচলাইশ এমএম টাওয়ারে মোর্শেদকে ডেকে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন করে। ওই দিন জোরপূর্বক স্ট্যাম্প ও অলিখিত চেকে সই নেয়। মোবাইল ও পাসপোর্ট কেড়ে নেয়।

২০১৯ সালে ২৯ মে চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে নিয়ে দুটি গাড়িতে করে ১০-১২ জন যুবক বাসায় আসেন। পারভেজ ইকবাল দলের অন্যদের নিয়ে লিফটে করে ওপরে উঠে বাসার দরজা ধাক্কাতে থাকে। এ সময় দরজা খুলতে না চাইলে লাথি মারতে থাকে তারা। নিজের ও শিশুকন্যার নিরাপত্তার জন্য দরজা খুলতে না চাইলেও দরজার অন্যপ্রান্ত থেকে হুমকি দিয়ে পারভেজ ইকবাল দরজা খুলতে চাপ দিতে থাকেন। ভীত হয়ে পালিয়ে আমরা নিকটাত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিই। সহযোগিতা চাই পুলিশের কাছে। থানায় জিডিও করি, কিন্তু শেষরক্ষা পাননি মোর্শেদ। চাপ সইতে না পেরে দেশ ছেড়ে জাপান চলে যেতে চাইলে, তারা খবর পেয়ে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। এভাবে তার আত্মরক্ষার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।‌

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com