অনলাইন ডেস্ক : আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে তালেবানের সাথে লড়াইয়ে টিকতে না পেরে এক হাজারেরও বেশি আফগান সেনা সদস্য সীমান্ত অতিক্রম করে পার্শ্ববর্তী তাজিকিস্তানে পালিয়ে গেছে বলে দেশটির সরকার নিশ্চিত করেছে। অপরদিকে তাজিকিস্তানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের বাদাখশান প্রদেশের কয়েকটি জেলায় যুদ্ধের পর জীবন বাঁচানোর তাগিদেই এসব আফগান সৈন্য তাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। খবর বিবিসির।
আফগানিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা এখন তালেবানের দখলে এবং প্রতিদিনই তারা নতুন নতুন জেলা সরকারি বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া বাদাখশানে তালেবান যোদ্ধারা দ্রুত ওই এলাকার প্রধান শহর ফায়েজাবাদের দিকে এগিয়ে আসছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই সীমান্তবর্তী কয়েকটি ঘাঁটি থেকে আফগান সেনাদের পালানোর ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেশী অপর দেশ উজবেকিস্তানেও কিছু আফগান সৈন্য আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সর্বশেষ এই ঘটনায় এক হাজারেরও বেশি আফগান সৈন্যকে তাজিকিস্তানে ঢুকতে দেয়া হয়েছে। এদিকে, সেপ্টেম্বরের সময়সীমাকে সামনে রেখে আফগানিস্তানে মোতায়েন আন্তর্জাতিক বাহিনীর বেশিরভাগ সেনাকেই সেখান থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
কিন্তু তালেবানের সাথে সরকারি বাহিনীর লড়াই যদি আরও তীব্র হয় তাহলে শরণার্থীর ঢল সীমান্ত অতিক্রম করে আশেপাশের দেশে চলে যেতে পারে। আর মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এখন থেকেই সেই পরিস্থিতির জন্য তৈরি হচ্ছে।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ন্যাটো বাহিনীর সব সদস্যের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে যদি সব বিদেশি সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে না যায় তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তালেবান।
আফগানস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকে আশরাফ ঘানি সরকারের মধ্যে হতাশা বেড়েছে। কারণ একের পর এক জেলা দখল করে নিচ্ছে তালেবান। তবে তালেবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন বলেন, কাবুলকে সামরিকভাবে দখল করা ‘তালেবানের নীতি নয়’। অপরদিকে কাতার থেকে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হওয়ার পর কোনও বিদেশি সেনা এমনকি সামরিক বাহিনীর ঠিকাদাররাও কাবুলে অবস্থান করতে পারবেন না।
এদিকে, তালেবানের বিরুদ্ধে ফের অস্ত্র তুলে নিয়েছেন কয়েক ডজন আফগান নারী। কেউ হাতে নিয়েছেন মরণঘাতী ভারী অস্ত্র। অনেক নারী আবার মিছিল করেছেন দেশটির ঘোর প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী ফিরোজকোহে। এরই মধ্যে তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা নারীদের অনেকেই হাত মিলেয়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি সরকারের সাথে।
এসব নারীদের দাবি তালেবানের শাসনামল অর্থাৎ ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল ছিল আফগান নারীদের জন্য অন্ধকার সময়। তালেবানের আমলে নারীদের অধিকার হরণ করা হয়েছিল। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবাঞ্চিত ছিল আফগান নারীরা। ধর্মীয় আইনের নামে নারীদের অধিকার ও ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া নারীদের।
তলেবানের সঙ্গে লাড়াইয়ে প্রস্তুত এমন নারীর সংখ্যা কত তা নিশ্চিত করতে পারেনি আশরাফ ঘানি প্রশাসন। তবে তাদের দাবি ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে ভারী অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া নারীদের সংখ্যা।