ধর্ম ডেস্ক : কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কিংবা শুকরিয়া আদায়ের সর্বশ্রেষ্ঠ মডেল হলেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আল্লাহ তাআলা যার আগের এবং পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণার পরও তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশে প্রতিদিন ৭০/১০০ বার তাওবা করতেন। রাত জেগে নামাজ পড়তেন। কিন্তু কেন তিনি বেশি বেশি তাওবাহ-ইসতেগফার, দোয়া ও নামাজ পড়তেন?
মহান আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে নেয়ামত লাভ করে মুমিন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলার ঘোষণা এবং হাদিসে বর্ণিত দোয়া, তাওবাহ-ইসতেগফার ও নামাজের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর তবে আমি অবশ্যই তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
কৃতজ্ঞতা বা শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম উপায়
বেশি তাওবাহ, সেজদা ও নামাজ পড়ার কারণ বর্ণনায় বিশ্বনবি বলতেন-‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞপনকারী বান্দা হবো না?’ হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-
১. হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কোনো খুশির সংবাদ বা এমন কিছু পৌঁছত আর তাতে তিনি সন্তুষ্ট হতেন; তখন তিনি আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সেজদায় লুটিয়ে পড়তেন।’ (আবু দাউদ)
২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে উঠে নামাজ পড়তেন এমনকি তার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) পা ফুলে ফেঁটে যাওয়ার উপক্রম হতো। একবার আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমীপে নিবেদন করি-
‘হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কেন এতো কষ্ট করেন? আল্লাহ তাআলা তো আপনার আগের পরের সব দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং দুর্বলতা থেকে মুক্ত রাখার দায়িত্বও স্বয়ং আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেছন! উত্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
أَفلا أَكُونُ عَبْدًا شَكُورًا
‘আমি কি আমার প্রভুর অনুগ্রহ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী বান্দা হবো না?’ (বুখারি)
উল্লেখিত হাদিসের আলোকে অধিকাংশ ইসলামিক স্কলাররা নিয়মিত ন্যূনতম দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করার কথা বলেছেন। আবার অনেকে শুকরিয়া আদায়ে শুধু সেজদার কথা বলেছেন। তবে সেজদার পাশাপাশি নামাজ আদায়ে দুইটি আমল হয়ে যায়। একটি নামাজ অন্যটি সেজদা। আর সে কারণেই কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের সেরা মাধ্যম হলো- নামাজ।
শুকরিয়া আদায়ে দোয়া
আল্লাহর নেয়ামত লাভে নামাজের পাশাপাশি তাঁর শুকরিয়া আদায়ে দোয়া করার বিষয়টিও উঠে এসেছে কুরআনে। হজরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম পিপীলিকার কথা শুনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করতে দোয়া করেন। যা আল্লাহ তাআলার অনেক পছন্দ হয়ে যায়। আর আল্লাহ তাআলা শুকরিয়া জ্ঞাপনের এ দোয়া উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য কুরআনুল কারিমে তুলে ধরেন। তাহলো-
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
উচ্চারণ : ‘রাব্বি আওজিনি আন-আশকুরা নিমাতাকাল্লাতি আন্আমতা আলাইয়্যা ওয়া আলা ওয়া-লিদাইয়্যা ওয়া আন আ’মালা সা-লিহান তারদাহু ওয়া আদখিলনি বিরাহমাতিকা ফি ইবাদিকাস সালিহিন।’
অর্থ : ‘হে আমার প্রভু! আমাকে ও আমার পিতামাতাকে যে নিয়ামত তুমি দান করেছ তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার শক্তি দান কর। আর আমি যাতে তোমার পছন্দনীয় সৎকর্ম করতে পারি এবং আমাকে তোমার অনুগ্রহে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর।’ (সুরা নামল : আয়াত ১৯)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, যে কোনো হাসি-খুশির সংবাদে মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি শুকরিয়া আদায় করার জন্য সেজদায় লুটিয়ে পড়া। শুকরিয়া আদায়ে কুরআনে বর্ণিত দোয়া যথাযথভাবে আদায় করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শুকরিয়া আদায়ে নামাজ পড়ার এবং দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।