নিউজ ডেস্ক : প্রতিদিনের জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর অন্যতম আগুন। সেই আগুনই কখনো কখনো বিভীষিকা হয়ে দেখা দেয়। ধ্বংসযজ্ঞ চালায় মানবসমাজে, ছিনিয়ে নেয় অসংখ্য প্রাণ। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে, বাড়ি, অফিস, কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বিপনীবিতান, বহুতল ভবন, যানবাহন- সর্বত্র হঠাৎ করে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
আগুন লেগে গেলে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। হুড়োহুড়ি বা তাড়াহুড়োয় অনেকই ভুল সিদ্বান্ত নেন, যার যার মাশুল দিতে হয় বেশ কঠিনভাবে। আগুন যদি লেগেই যায় তাহলে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। সামান্য কিছু তথ্য জানা থাকলে বা একটু সতর্ক হলেই ঠেকানো যাবে মানবিক বিপর্যয়, বাঁচানো যেতে পারে মূল্যবান জীবন ও সম্পদ। তাহলে জেনে নিন আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আপনার করণীয়গুলো কী কী।
বিচেলিত হবেন না: অন্যের কথায় বিচলিত না হয়ে আদৌও আগুন লেগেছে কিনা তা বোঝার চেষ্টা করুন। আগুন ছোট থাকতেই অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার করে তা নিভিয়ে ফেলুন। আগুন যদি বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক কোনো দ্রব্য থেকে না লেগে থাকে তাহলে আপনি সেটা নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করতে পারেন। যে আগুন আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে তা নেভানোর চেষ্টা করতে যাবেন না। যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিন। জরুরী পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করুন।
ভবন ত্যাগ করুন: আগুন বৃদ্ধি পেয়ে যদি এমন অবস্থায় পৌঁছায় যে সেটা সহজে নেভানো যাবে না, তাহলে দ্রুত ভবন ত্যাগ করুন। আগুন লাগলে দামি জিনিসপত্র বাঁচাতে গিয়ে অহেতুক সময় নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, সবচেয়ে দামি বস্তুটি হলো আপনার নিজের জীবন। তাই আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগে বাড়ির সবাই সাবধানে বেরিয়ে আসুন নিরাপদ জায়গায়।
কাপড়ে আগুন ধরলে দৌড়াবেন না: যদি আপনার পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যায়, তাহলে ভুলেও দৌড়াবেন না। এতে আগুন আরো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। যত জলদি সম্ভব মাটিতে শুয়ে পড়ুন, দুই হাত দিয়ে আপনার মুখ ঢেকে সামনে পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত আগুন নিভে না যায় ।
ধোঁয়ার জন্য মুখে কাপড় পেঁচিয়ে নিন: যদি সারা বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে যায়, তাহলে বের হবার সময় নাকে মুখে একটা কাপড় চেপে ধরুন এবং যতটা সম্ভব নিচু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে অথবা প্রয়োজনে গড়াতে গড়াতে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসুন। ধোঁয়ার মধ্যে নিশ্বাস নেওয়া খুবই বিপদজনক। ধোঁয়ার বিষাক্ত গ্যাসসমূহ চোখে মুখে ঢুকে সসম্যা সৃস্টি করতে পারে। এমনকি শ্বাসনালীও পুড়ে যেতে পারে।
দরজা খুলবেন সাবধানে: যদি দেখেন দরজা গরম, দরজার নিচ দিয়ে বা ফাঁকা জায়গা দিয়ে ধোঁয়া আসছে এবং দরজার হাতলও গরম তাহলে ভুল করেও দরজা খুলতে যাবেন না। তখন বুঝে নিতে হবে আগুন কাছে চলে এসেছে। যদি দেখেন দরজার হাতল ঠাণ্ডা, দরজার ফাঁক দিয়ে ধোঁয়া আসছে না তাহলে ধীরে ধীরে ও সাবধানতার সঙ্গে দরজা খুলে দ্রুত ভবন থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করুন।
রান্না ঘরে আগুন লাগলে যা করবেন: আগুন যদি রান্না ঘরের তেল বা গ্রিজ থেকে সৃষ্টি হয়, তাহলে তার উপর বেকিং সোডা বা লবণ ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এটা যদি রান্না করার পাত্রে সূত্রপাত হয় তাহলে তা ঢাকনা দিয়ে দ্রুত ঢেকে দিন। জ্বলতে থাকা কড়াইয়ে পানি ঢালবেন না বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করবেন না।
বৈদ্যুতিক কারণে আগুণ লাগলে করণীয়: বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বা মাল্টিপ্লাগের আশপাশে কাগজপত্র, বাক্স রাখার সময় সাবধান থাকুন। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মুঠোফোন চার্জার ইত্যাদি বৈদ্যুতিক প্লাগে লাগিয়ে রেখে দেবেন না। কাজ শেষ হলে সুইচ বন্ধ করে প্লাগ থেকে খুলে রাখুন। কোনো কারণে বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগলে প্রথমেই মূল সুইচ বন্ধ করে দিন।
আটকে পড়লে যা যা করবেন: যদি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন তাহলে ডাস্ট টেপ, ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা ও তার আশেপাশের সব ফাঁকা জায়গা ও বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করে দিন । জানালার বাইরে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ঝুলিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে অগ্নি নির্বাপন কর্মীরা বুঝতে পারেন আপনি ভেতরে আছেন। সামান্য আহত হলেও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না। আহত হলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন।
লিফট নয় সিঁড়ি ব্যবহার করুন: অগ্নিকান্ডের সময় ভবন থেকে বের হবার জন্য লিফট ব্যবহার করা যাবে না। এ সময় সিঁড়ি ব্যবহার করতে হবে। এজন্য হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন তার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। দরজা, জানালা, সিঁড়ির অবস্থান ওদ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। বাড়ির সবাইকে, অফিসের সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানিয়ে রাখাটা খুব জরুরি।
গাড়িতে আগুন লাগলে থামানো উচিত: যদি গাড়িতে আগুন লেগে যায়, তাহলে অবশ্যই থামাতে হবে। গন্তব্য কাছাকাছি, তাই একটু পরে থামাবেন, এমনটা ভুলেও ভাবতে যাবে না। অগ্নিকান্ডের সময় যতোটা সম্ভব শরীরের বাড়তি কাপড় খুলে ফেলতে হবে। বিশেষ করে যদি শরীরে কোনো সিনথেটিক জাতীয় কাপড় থাকে তবে তা অবশ্যই খুলে ফেলতে হবে। কারণ সিনথেটিক জাতীয় কাপড়ে আগুন খুব দ্রুত লেগে যাবার আশঙ্কা থাকে। এ সময় গায়ে আগুন লেগে গেলে দৌড়াদৌড়ি না করে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে হবে।