রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

সাতক্ষীরায় এক স্কুলে ৫০ বাল্যবিয়ে

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ১৮১ বার পঠিত

 

খুলনা প্রতিনিধি : বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা বাড়াতে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। ২০১৯ সালে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সব শিক্ষার্থীকে বাল্যবিয়ে না করার শপথ করানো হয়।

সে সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে একটি ডাটাবেজের আওতায় এনে লাল কার্ড প্রদান করে উপজেলা প্রশাসন। সাতক্ষীরায় বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও প্রশাসনের উদ্যোগে এরকম নানা কর্মসূচির কারণে বাল্যবিয়ের হার প্রায় অর্ধেকে নেমে আসে। কিন্তু করোনাকালে সেই চিত্র পাল্টে গেছে।
গত দেড় বছরে জেলায় প্রায় ৩০০ বাল্যবিয়ের আয়োজন করা হয়। তার মধ্যে প্রশাসন থেকে বন্ধ করা হয়েছে ২২০টি। আরও গোপনে ৫০টি বাল্যবিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বাল্যবিয়ের শিকার ৫০ ছাত্রীই আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের। করোনার দেড় বছরে বিভিন্ন সময়ে তাদের বিয়ে হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এ কে এম শফিউল আজম বলেন, গত আগস্ট মাসে ২২টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে তালায় ১৫টি ও সদরে সাতটি। আর করোনাকালের শুরু থেকে গত মাস (আগস্ট) পর্যন্ত ১৪৯টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ হয়েছে। স্কুল-কলেজ খোলার পর এ বিষয়ে সার্বিক তথ্য পাওয়া সহজ হবে বলে জানান তিনি।

আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাল্যবিয়ের শিকার ৫০ ছাত্রীর মধ্যে দশম শ্রেণির ১৪, নবম শ্রেণির সাত ও অষ্টম শ্রেণির ১১ জন। এছাড়া ১৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীও রয়েছে। এসব স্কুলছাত্রী ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের।

প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ২০২০ সালে স্কুলের ৩২ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়। ৬৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২১ জন ফরম করেনি। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে বাল্যবিয়ের তথ্য বেরিয়ে আসে।

তিনি আরও জানান, দুই মাস আগে তিনি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ৪৭ জন ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার তালিকা পাঠিয়েছেন। করোনাকালে এই স্কুলের ৬৬ জন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫০টিই বাল্যবিয়ে।

বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্য স্থানীয় কাজি মো. রেজাউল করিম বলেন, বাল্যবিয়ে আইনসঙ্গত না হওয়ায় নিবন্ধনও হয় না। নিবন্ধন ফরমের নকল বিধিবহির্ভূতভাবে বিভিন্ন দোকান বিক্রি করে। কিছু মাওলানা কাজি সেজে সেই সব নকল ফরমে বিয়ে পড়ান।

বাল্যবিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ২৫টি বাল্যবিয়ের বিষয়ে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৪৯টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করা হয়েছে।

আলিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কাঞ্চন কুমার দে বলেন, এক স্কুলের এতগুলো ছাত্রীর বিয়ে কীভাবে হয়েছে, তা জানা নেই। এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কাছে কোনও তথ্য নেই। গত এক বছরে যাদের বিয়ে হয়েছে সবার বয়স ১৮ বছরের ওপরে। তবে গোপনে বাল্যবিয়ে হয়ে থাকলে সেই তথ্য ইউনিয়ন পরিষদে জানায় না।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের সাতক্ষীরার কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, করোনার আগে জেলায় বাল্যবিয়ের হার অর্ধেকে নেমে এসেছিল। গত দেড় বছর করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় সেই হার বেড়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রটরা সক্রিয় রয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্র অভিযান চালিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তারা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com