রাজধানীর শীর্ষ চাঁদাবাজদের একজন আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু। যার বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ, কোতোয়ালি ও হাজারীবাগ থানায় রয়েছে মামলা। এছাড়া কয়েক ডজন জিডিও রয়েছে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পুলিশকেও আক্রমণ করতে ছাড়েননি। গ্রেপ্তারও হয়েছেন। হলে কী হবে, জেলখানা থেকে বেরিয়ে আবারো সেই পুরনো কাজ। থানা পুলিশ-কারাগার তার কাছে ডাল-ভাত। নিজের পাশাপাশি চাঁদাবাজির একটি গ্রুপও গড়ে ফেলেছেন। চাঁদাবাজির পাশাপাশি দখলবাজিতেও কম জোর নয়।
চাঁদাবাজ হিসেবে আনু এলাকায় একটি আতঙ্ক। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নতুন কেউ বাড়ি করতে গেলেও তাকে চাঁদা দিতে হয়। বর্তমানে আনু ও তার সহযোগীরা এলাকায় বেপরোয়া। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন কামরাঙ্গীরচরবাসী।
কামরাঙ্গীরচর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আনোয়ার হোসেন আনুর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। তার বিরুদ্ধে পুলিশকেও আক্রমণ করার অভিযোগ রয়েছে। তাকে আমরা অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকবার গ্রেপ্তারও করেছি। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো অপকর্ম করে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন আগে আনোয়ার হোসেন আনুর দাদা, পিতা ও চাচা মিলে তাদের ৪৬ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। কিন্তু আনু ভয়ভীতি দেখিয়ে ২০ বছর ধরে দফায় দফায় অসহায় বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সম্প্রতি এই চক্রটি পরিকল্পিতভাবে দলবল নিয়ে রাতে আপন বৃদ্ধ মা সখিনা বেগম ও স্ত্রীকে কৌশলে কামরাঙ্গীরচরের স্থানীয় ডা. ওয়াহিদুজ্জামানের বাড়িতে জোর করে ঢুকিয়ে তার বাড়ি দখলে নেয় এবং ডা. ওয়াহিদুজ্জামানের সাইনবোর্ড ও বৈদ্যুতিক মিটার খুলে নিয়ে যায়। দখলের খবর কামরাঙ্গীরচর থানায় জানানো হলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন পুলিশের উপস্থিতিতে আনোয়ার হোসেন আনুর মা এবং স্ত্রীকে তাদের দখলকৃত বাড়ি থেকে বের করে দেন। এ ঘটনায় আনুর বিরুদ্ধে কামরাঙ্গীরচর থানায় মামলা হয়েছে।
এছাড়া কামরাঙ্গীরচরের ম্যাচ ফ্যাক্টরি, ব্যাটারিঘাট, বড়গ্রাম, রূপনগর এবং কামরাঙ্গীরচর সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন ও কামরাঙ্গীরচর নতুন বিদ্যুৎ অফিস এলাকায় প্রায় ১০ একর সরকারি খাসজমি দখল হয়ে গেছে। দখলের পর জেলা প্রশাসক ও ভূমি জরিপ অফিসের এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার যোগসাজশে জমির ভুয়া মালিকানা তৈরি করে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে তার বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আশরাফ আলী আজম ও তার ভাই মীর নেওয়াজ আলীর ওপর হামলা ও হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করার অভিযোগে মামলা।
আনোয়ার হোসেন আনুর বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল হামলা করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী। চাঁদার দাবিতে তার ওপর ককটেল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে মামলা তুলে নিতেও তাকে হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি থানায় জিডিও দায়ের করেন।
চাঁদার দাবিতে হুমকি প্রদান করায় মুফতি কামারুজ্জমান ও অপর আরেক ব্যবসায়ীও তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এছাড়া আজিম ও মিজানুর রহমান নামের ব্যক্তিও তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন। এর মধ্যে মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, নতুন বাড়ি তৈরি করছিলেন তিনি। এ সময় আনু তার নিকট চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে হত্যা করা হবে এমন হুমকিও দেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫৬ নং কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আনোয়ার হোসেন আনু একজন সন্ত্রাসী। তার রয়েছে জালাল দেওয়ান, আলী আহমদ, আমিনুল আলী ও নিজ নামে বাহিনী। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে পশ্চিম আশ্রাফাবাদ এলাকায় প্রায় ২০টি বাড়িওয়ালাকে প্রায় ২০ বছর যাবৎ জিম্মি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এমন কোনো অপকর্ম নাই যে সে করে না। তার বিরুদ্ধে এলাকার শত শত মানুষের অভিযোগ রয়েছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে আনুর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।