৫০ ঘণ্টা পেরোলেও সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে সোমবার রাতেও হয়তো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
সোমবার রাত ১০টার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ডিপোতে থাকা অন্তত ১৫টি কনটেইনারের ভেতর এখনো জ্বলছে আগুন। কনটেইনারগুলোর দরজা বন্ধ থাকায় ভেতরে পানি প্রবেশ করানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে কনটেইনারের তালা কেটে দরজা খোলার চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহাকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুৎসুদ্দি জানান, রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন জ্বলতে থাকা একটি কনটেইনারের দরজার তালা কাটা হয়। কিন্তু আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দরজা বাঁকা হয়ে যাওয়ায় সেটি খোলা যাচ্ছিল না। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর দরজা খুলে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভাতে সক্ষম হন। জ্বলতে থাকা অন্য কনটেইনারগুলোর আগুনও একইভাবে নেভানোর চেষ্টা করছেন তারা।
ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা আরো জানান, এখন জ্বলতে থাকা কনটেইনারগুলোর সবকটিতেই রফতানি পোশাক রয়েছে। রাসায়নিকের কনটেইনারগুলো আগুন লাগার স্থান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে রাতের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণের সম্ভাবনা কম বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে ডিপোর লোডিং পয়েন্টের ভেতর আগুন লাগে। খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে একটি কনটেইনারে থাকা রাসায়নিক থেকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের সময় ঘটনাস্থল থেকে অন্তত পাঁচ কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের অনেক বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ার খবরও পাওয়া যায়।
বিস্ফোরণ ও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়া দগ্ধ ও আহত হয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন শতাধিক।
চিকিৎসকরা বলছেন, আগুনে দগ্ধদের বেশিরভাগের চোখ ও শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিট ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন অর্ধশতাধিক। বার্ন ইউনিটে আসন সংকটের কারণে ৩১ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা চলছে। আহতদের মধ্যে থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে, নিহতদের মধ্যে ২১ জনের পরিচয় শনাক্ত করতে ৩৭ জনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সোমবার দিনভর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে স্থাপিত বুথে এসব নমুনা সংগ্রহ করে সিআইডির ফরেনসিক বিভাগ। এ সময় বুথের সামনে ভিড় জমান নিখোঁজদের স্বজনরা।