সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

সাগর যাত্রায় প্রস্তুত ১২ হাজার ফিশিং বোট

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২
  • ১৪৬ বার পঠিত

দীর্ঘ ৬৫ দিন পর শনিবার মধ্য রাত থেকে শেষ হচ্ছে সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা। এর ফলে জেলে পাড়া আবারো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে ফিশিং ট্রলার নির্মাণ, মেরামত জাল বুনন থোকে শুরু করে চাল, তেল অন্যান্য মালামাল সংগ্রহের মাধ্যমে জেলে বহদ্দার, মাঝি ও শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রতিটি জেলে পল্লীতে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ।

মার্চ-এপ্রিলের দুই মাসের অভয়ারণ্যের নিষেধাজ্ঞা, মা-ইলিশ ধরায় অক্টোবরের দুইটি অমাবস্যা-পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতি বছর ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞাসহ সারা বছর ১৪৭ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে হয় জেলেদের।

এ সময় জেলে পল্লীতে দেখা দেয় চরম খাদ্য সংকট। এই নিষেধাজ্ঞায় বোট মালিকেরা নিজেদের ক্ষতি পুষিয়ে টিকে থাকতে পারলেও কর্মহীন হয়ে পড়ে শত শত দিনমজুর সাধারণ জেলে। এছাড়া অন্য কোনো কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় রুটিরুজির জন্য সমুদ্রের দিকেই থাকিয়ে থাকতে হয় এসব জেলেদের।

জীবন বাজি রেখে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় গভীর বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ করে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও মৎস্য রপ্তানি করছে। জেলেরা বছরে ১৪৭ দিন বেকার থাকা অত্যান্ত অমানবিক বলে জানান তারা । তাদের জন্য নিষেধাজ্ঞার এই সময় বেকার ভাতা প্রদানের দাবী জানান হত দরিদ্র জেলে পরিবারগুলো।

সরেজমিনে কক্সবাজার জেলার বিশেষ করে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া,ঈদগাঁও কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার জেলে পাড়া ঘুরে দেখা গেছে হতদরিদ্র জেলে পরিবার গুলোর হাহাকার ও করুন দুর্দশা। নিষেধাজ্ঞার আগে যে স্থানে জেলে আর ক্রেতার হাঁক-ডাকে সরব ছিল, নিষেধাজ্ঞার পর সে জায়গাগুলো বিষন্নতায় ছেয়ে যায়। সাগর থেকে মাছ ধরার সব ট্রলার এবং ছোট ছোট নৌকা সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয় উপকূলে। এদিকে নিষেধাজ্ঞার পর মানুষের আনাগোনা কমে যাওয়ায় জেলে পল্লী ঘিরে গড়ে ওঠা শত শত বন্ধ দোকানপাট আবার খুলতে শুরু করেছে। ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্যতা।

মাছ ধরার এই দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেন মহেশখালীর আবুবকর মাঝি ও কুতুবদিয়ার ইসমাইল মাঝি। চকরিয়ার জেলে শ্রমিক আয়ুব আলী বলেন, মাছ ধরা নিষেধ। তাই প্রতিদিন বহদ্দারদের (বোট মালিক)কাছে আসি আর দাদন নিয়ে যাই। কেউ কেউ জাল তুনে (মেরামত) সময় কাটাচ্ছে। সারা দিন জাল তুনে ২০০-৩০০ টাকা পেলেও এই টাকা দিয়ে তো আর সংসার চলে না। সাগরে নামতে পারলে দিনে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পেতাম। কিন্তু এখন যা পাই তা দিয়ে কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি।

টেকনাফের আবদুল্লাহ মাঝি বলেন, আমাদের জীবনটা পিঁপড়ার জীবনের মতো হয়ে গেছে। এক মৌসুমে আয় করে সারা বছর চলতে হয়। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় বিভিন্ন এনজিও থেকে লোন নিয়ে ধার-দেনা করে চলতে হয়। আর যখন সাগরে নামতে পারি তখন এসব ধার-দেনা শোধ করতে হয়।

কক্সবাজার সদরের সমিতি পাড়ার আবুল কালাম বহদ্দার নামের এক ট্রলার মালিক বলেন, আমার চারটি মাছ ধরার ট্রলার রয়েছে। সাগর থেকে তুললে প্রতিটি ট্রলারে কাজ করাতে হয়। তাই এই সময়ে তা করে নিয়েছি।এদিকে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন দেশের বা অঞ্চল থেকে জেলেরা বড় বড় জাহাজে করে এসে আমাদের সীমানা থেকে মাছ মেরে নিয়ে যাচ্ছে।যা আইনের চরম লংঘন বলে মনে করেন এই ফিশিং বোট মালিক।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, জেলার ছোট- বড় ১২ হাজার ফিশিং বোট এখন সাগর যাত্রায় যেতে প্রস্তুত। উপকূলের জেলেরা দীর্ঘদিন বসে থাকার ফলে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করেছে। তবে অনেকেই আবার সরকারের দেয়া প্রনোদনা প্যাকেজ পেয়েছেন। অনেক জেলে বহদ্দার আছেন, আড়তদার, মহাজন, ব্যাংক বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে সাগরে মাছ ধরার কাজে লাগায়। এখন দীর্ঘ সময় মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় এসব লোন নিয়ে বিপাকে পড়েছে ট্রলার মালিকেরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও কক্সবাজার সদরের শত শত বহদ্দার। চলমান ৬৫ দিনের দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞায় সরকারের পক্ষ থেকে চালের সহায়তা প্রদান করা হলেও কোনো কোনো জেলের কপালে তাও জোটেনি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বজলুর রশিদ বলেন, চলমান নিষেধাজ্ঞায় জেলেদের জীবন নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভিজিএফ (চাল) বিতরণ করা হয়েছে। হয়তো কেই কেই বাদও পড়েছেন। আর অন্যান্য এলাকা থেকে এসে মাছ ধরার কাজ করেছেন অথচ প্রনোদনা পায়নি।

অনেক জেলে শ্রমিক নিবন্ধিত না থাকায় বাদ পড়তে পারেন। এনআইডি, লাইফ জ্যাকেট, বয়া, অন্যান্য আত্মরক্ষার সরঞ্জাম ছাড়া কোন জেলে শ্রমিক যাতে মাছ ধরতে সাগরে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আর প্রতিটি ফিশিং বোটে যাতে রেডিও থাকে এবং আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা যাতে মেনে চলে এ বিষয়ে জোরালো তাগাদা দেয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com