রাজধানীর সব কয়েকটি লেভেল ক্রসিংই অরক্ষিত। প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে সিগন্যাল যন্ত্র ও টেলিযোগাযোগ সিস্টেম। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন খোদ গেটম্যানরাই। যদিও লেভেল ক্রসিংয়ের মানোন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সনাতন পদ্ধতি সংস্কার কেবল অর্থের অপচয়। লাগবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিজিটালাইজেশনের সক্ষমতা নেই তাদের।
রাজধানীর মগবাজার লেভেল ক্রসিং। ব্যস্ত এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই পারাপার হয় শত শত যানবাহন। তবে ক্রসিংটি চলছে সনাতন পদ্ধতিতেই। মাঝেমধ্যেই বিকল থাকে এখানকার সিগন্যাল সংকেত যন্ত্র। তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাত দিয়ে ঠেকাতে হয় অন্য যানবাহন।
এখানে ১২ জন গেটম্যান দরকার হলেও স্থায়ী মাত্র ৪ জন। বেশির ভাগ সময়ই বিচ্ছিন্ন থাকে রেললাইনের সঙ্গে সংযুক্ত বৈদ্যুতিক সংযোগ। ফলে অনেক সময় ট্রেন যাওয়া আসার খবর পৌঁছায় না সময়মতো। গেটম্যানরা বলছেন, তাদের জীবনেরই নেই নিরাপত্তা।
একই অবস্থা কারওয়ান বাজার লেভেল ক্রসিংয়ের। এখানকার টেলিযোগাযোগ সিস্টমই বিকল। ঠিকমতো কাজ করে না সিগন্যাল সংকেতও। ফলে ট্রেন আসার খবরও ঠিক মতো পান না তারা।
সম্প্রতি রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৭০০ লেভেল ক্রসিং প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে সংস্কার। গেটম্যানরা বলছেন, ঢাকার বাইরে এক হাজার ৪০০ অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে নেই গেটম্যান। এমনকি নেই কোনো ব্যারিয়ার।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সনাতন সিগন্যাল পদ্ধতির উন্নয়নে খরচ কেবল অর্থের অপচয়। নিতে হবে আধুনিক সিগন্যালিং প্রকল্প।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, পুনর্বাসন প্রকল্প নিতেই পারি। কিন্তু এতে জনগণের অর্থের অপচয়ই হবে। এই আধুনিক যুগে, যেখানে রেলের সোনালি যুগ চলছে, সেখানে স্বয়ংক্রিয় লেভেল গেট নেই। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বারবার বলছি।
তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের এক হাজার ৪০০ ক্রসিংই অবৈধ। বিপুলসংখ্যক ক্রসিংকে ডিজিটাল করার সক্ষমতা নেই তাদের। তবে পরিকল্পনা আছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, রেলের পক্ষে এটা বর্তমানে সম্ভব না। কারণ এতে অর্থ অর্থ ব্যয় হবে। ফলে দেখা যাবে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যাচ্ছে। রেল পরিচালনার চেয়ে এর গেট রক্ষাণাবেক্ষণে খরচ বেশি হয়ে যাবে। তখন আমাদের মূল কাজ- রেল পরিচালনা, রেলের ট্র্যাক রক্ষণাবেক্ষণ, রেলের ইঞ্জিন-বগি রক্ষণাবেক্ষণের বিপরীতে দেখা যাবে লেভেল ক্রসিংয়ের ক্ষেত্রে সব টাকা ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
সারা দেশে লেভেল ক্রসিং রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ৫ কোটি টাকার বেশি খরচ করে রেল।