নজিরবিহীন বন্যায় পাকিস্তানের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। এরই মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১১শ। গৃহহীন হয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি। দেশটিতে চরম মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর কাছে ত্রাণ সহায়তা চেয়েছেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান। খবর বিবিসির।
যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় এরই মধ্যে প্লাবিত দেশটির সিন্ধু ও পাঞ্জাবসহ একাধিক প্রদেশ। প্রতিদিনই লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। বাড়ছে গৃহহীনের সংখ্যা।
নজিরবিহীন এ বন্যায় বিপৎসীমার ওপর প্রবাহিত হচ্ছে দেশটির অধিকাংশ নদ-নদীর পানি। এতে তলিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক; ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু রাস্তাঘাট ও সেতু। ফলে এক প্রকার ভেঙে পড়েছে আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যায় ডুবে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এতে পাকিস্তানজুড়ে এখন কেবলই হাহাকার। দেখা দিয়েছে খাদ্য ও পানির মারাত্মক সংকট।
পরিস্থিতির এতটাই অবনতি হয়েছে যে, এ মুহূর্তে দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের জলবায়ুমন্ত্রী। দেশটির পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলমান এ ভয়াবহ বন্যায় এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এতে এরই মধ্যে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি মানুষ। সর্বত্রই দেখা দিয়েছে খাবার সংকট।
এক বাসিন্দা বলেন, বন্যায় মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। আমরা এরইমধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ তুলা ও ধান হারিয়েছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনাবাহিনী মাঠে আছে। যদিও, সব জায়গায় তারা পৌঁছাতে পারছেনা। আর এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ অনুমান করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে, এটি যে আমাদের আশঙ্কার চেয়েও কয়েকগুন ছাড়িয়ে গেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
সোমবারও, সিন্ধ ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে যান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এদিন করাচি ও চারসাদ্দা জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখেন তিনি। এসময় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি তাদের খোঁজ খবর নেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশও দেন শাহবাজ।
এছাড়াও, এদিন সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া। এ সময় ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তান মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্ত উল্লেখ করে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে ত্রাণ সহায়তা বাড়াতে দেশি ও বিদেশি সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া।