নওগাঁর আত্রাইয়ে নিখোঁজের ২১ দিন পর নদীর কিনারা থেকে ইব্রাহিম হোসেন (৬) নামে এক শিশুর অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) ভোর ৫টার দিকে শিশুটির হত্যাকারী বুলবুল আহমেদ সোনারের তথ্যের ভিত্তিতে বিশা ইউনিয়নের শ্রীধরগুড়নই গ্রামের পারাপার ঘাটের দক্ষিণ পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
শিশু ইব্রাহিম উপজেলার শ্রীধরগুড়নই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে এবং শ্রীধরগুড়নই দাখিল মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির ছাত্র ছিল।
বুলবুল সোনার উপজেলার বিশা ইউনিয়নের শ্রীধরগুড়নই গ্রামের আব্দুল জলিল সোনারের ছেলে। গত ২৭ নভেম্বর বিকেলে উপজেলা থেকে বুলবুল সোনারকে গ্রেফতার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক এসব তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গত ১০ নভেম্বর শিশু ইব্রাহিম নিখোঁজ হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। জিডির পর পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করে। একপর্যায়ে শিশু ইব্রাহিমের বাবার শোবার ঘরে জানালার পাশে একটি চিঠি পাওয়া যায়। চিঠিতে বলা হয়: একটি সিম এবং একটি মোবাইল কিনে বাবুর দোকানের সামনে চুলার মধ্যে রেখে যেতে। একই সঙ্গে আরও ছয় লাখ টাকা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়। এরপর ২৬ নভেম্বর শিশুর বাবাকে একটি অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
তিনি বলেন, স্থানীয় সোর্স ও প্রযুক্তির সহায়তায় বুলবুল সোনারকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর বুলবুল জানায় সে একজন মুদি দোকানদার এবং স্থানীয় শ্রীধরগুড়নই দাখিল মাদ্রাসায় খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করে। তার বিভিন্ন জায়গায় ঋণ ছিল। সেসব টাকার জন্য ঋণদাতারা তাকে বারবার চাপ দিচ্ছিল। ঋণ থেকে মুক্তি পেতেই সে শিশুর বাবার কাছ থেকে টাকা নেয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু পুলিশের কাছে কথাটি বিশ্বাস না হলে তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
‘জিজ্ঞাসাবাদে বুলবুল আরও জানায়, গত ১০ নভেম্বর দুপুরে তার দোকানে গিয়ে শিশু ইব্রাহিম পাঁচ-ছয়টি বেলুন ফাটায়। শিশুটিকে দোকান থেকে চলে যেতে বলা হলেও চলে না গিয়ে আরও বেলুন ফাটাতে চায়। তাই রাগ করে শিশুটিকে গলা টিপে হত্যা করে চা স্টলের পেছনে ছাইয়ের স্তূপের মধ্যে বস্তাবন্দি করে পুঁতে রাখে। ১৮ নভেম্বর বালতিতে করে শিশুটির অর্ধগলিত মরদেহ পাশে আত্রাই নদীতে পুঁতে রেখে একটি বড় কংক্রিটের বস্তা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখে।’
পুলিশ সুপার বলেন, বৃহস্পতিবার বুলবুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে শিশুটির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান, সদর সার্কেল রাকিবুল হাসান ইবনে রহমান, আত্রাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারেকুর রহমান সরকারসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।