ষাটোর্ধ্ব মনির আহমদ। চাকরি করতেন একটি তেল কোম্পানিতে। দুদিন ধরে নিথর হয়ে পড়ে আছেন বাড়ির সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্সে। শোক কিংবা দাফন দূরে থাক, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার জন্যও নামানো হয়নি মনিরের লাশ। কারণ লাশটি গাড়িতে রেখেই তার অবসরকালীন ভাতার টাকা নিয়ে কলহে লিপ্ত হয়েছেন সন্তানরা।
ঘটনাটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার। বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনা এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের মধ্যে তৈরি করেছে তীব্র প্রতিক্রিয়া।
জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় মনির আহমদের মৃত্যু হয়। এরপর একদিন পেরিয়ে গেলেও হয়নি তার দাফন। সোমবার ব্যাংক না খোলা পর্যন্ত মাটি পাচ্ছেন না মনির। এমনটিই জানিয়ে দিয়েছেন সন্তানরা।
রোববার বিকেলে মনিরের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে রাখা আছে তার লাশ। ঝগড়াঝাঁটিতে ব্যস্ত ছেলে-মেয়েরা। ছেলেদের দাবি- হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৌশলে বাবার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে নেন তাদের এক বোন। সোমবার ব্যাংক খুললে টাকার হিসাব শেষে বাবার লাশ দাফন করবেন তারা।
মনির আহমদের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কিছুদিন আগে বাবাকে হাসপাতালে থেরাপি দেওয়ার নাম করে ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা তুলে নেন আমার বোন বেবী আক্তার। বাবা মারা যাওয়ার পরই টাকা তুলে ফেলার খবরটি আমরা পাই।
তিনি আরো বলেন, আমার ছোট ভাই সৌদি আরব থেকে আসবেন। পাশাপাশি সোমবার ব্যাংক খুললে ব্যাংকে গিয়ে হিসাব পেলে বাবার লাশ দাফন করা হবে।
তবে টাকা তুলে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বোন বেবী আক্তার। তিনি বলেন, বাবা কোনো টাকা দেননি আমাকে। আমি কোনো টাকাও ব্যাংক থেকে তুলিনি। তাদের অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট।
স্থানীয় এক নারী বলেন, একটি মানুষ মারা গেল, সেদিকে কারো খেয়াল নেই। সবাই টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। যে পরিবার-সন্তানদের জন্য সারাজীবন উপার্জন করে গেলেন ব্যক্তিটি। মৃত্যুর পর তারাই স্বার্থপরতা দেখালো।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সাহাব উদ্দিন বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় মনির আহমদের লাশ বাড়িতে আনা হলেও টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে সমস্যা চলছে। তার এক ছেলে বিদেশে রয়েছেন, তিনিও দেশে আসবেন বলে জেনেছি।
কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে।